মানুষের দুর্ভোগ ঘোচাতে সচেষ্ট হোন

সম্পাদকীয়

এবারের বন্যায় সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো সেসব এলাকার মানুষ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে পারেননি। অনেক জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

যেমন শেরপুরের মহারশি নদসংলগ্ন প্রত্যন্ত এলাকা ঝিনাইগাতী উপজেলা। সেখানে একটি অস্থায়ী বাঁধ থাকলেও নদে পলিমাটি জমে যাওয়ায় ও কিছু অংশ ভেঙে পড়ায় সেটির সুফল মিলছে না। বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল নেমে এসে বসতঘর, ফসলি জমি ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা মহারশি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদ। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের ঢল নেমে আসে মহারশিতে, যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীকে।

২০১৭ সালে সেখানে একটি অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হলেও গত জুন মাসে পাহাড়ি ঢলে এর বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ফলে সেখানকার মানুষের জন্য বড় দুর্ভোগ তৈরি হয়। শুধু একটি উঁচু ও স্থায়ী বাঁধের অভাবে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

উঁচু বাঁধ না থাকায় মেঘালয়ে বৃষ্টি হলেই মহারশি নদের পারে দুঃখ নেমে আসে। প্লাবিত হয় উপজেলা পরিষদ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, সদর বাজারসহ নিম্নাঞ্চল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

জুন মাসে দুই দফা পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন। বন্যায় ১৮টি কাঁচা ও পাকা সড়ক এবং ২৩ বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৮২টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে দুজনের মৃত্যুও ঘটে।

এত দিনেও কয়েকটি গ্রামে পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রয়ে গেছে। সড়কে গভীর খাদের সৃষ্টি হওয়ায় কোথাও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, কোথাও খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কোথাও জমিতে বালুর স্তর জমে থাকায় আমন আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। দুই মাস পার হয়ে গেলেও অনেক মানুষের ভোগান্তি নিরসন হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, মহারশি নদে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সচিবও আশ্বস্ত করেছেন।

আমরা আশা করছি, সেখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।