চট্টগ্রাম আদালতে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ করুন

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির চাকা ঊর্ধ্বমুখী রাখতে যে কয়টি নিয়ামক জাদুকরি ভূমিকা পালন করে চলেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে তার অন্যতম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এখন ৩৮ শতাংশ আর জিডিপিতে নারীর সরাসরি অবদান ২০ শতাংশ।

আর্থসামাজিক এই রূপান্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মক্ষেত্র ও জনপরিসর কতটা নারীবান্ধব, সেই প্রশ্ন যখন সামনে চলে আসে, তখন নারীর অগ্রযাত্রার এই চমকজাগানিয়া সাফল্যের গল্পটা ম্লান হয়ে যেতে বাধ্য।

বিশেষ করে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়, এ রকম শিশু আছে যে মায়েদের, তাঁদের জন্য পরিবেশটা কোনোভাবেই সংবেদনশীল নয়। বেশির ভাগ জনপরিসরে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় মায়েদের।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব সরকারি–বেসরকারি, প্রতিটি কর্মস্থলে দিবাযত্নকেন্দ্র ও মাতৃদুগ্ধদান কক্ষ স্থাপন করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ বছরের এপ্রিল মাসে উচ্চ আদালত এক রায়ে কর্মস্থল, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, শপিং মলের মতো জনসমাগমস্থলে এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে যে তেমন কোনো সাড়া নেই, তা চট্টগ্রাম আদালতের অ্যানেক্স ভবনের চিত্র থেকেই প্রতীয়মান হয়। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, চারতলা ওই ভবনে তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ ১৫টি আদালত রয়েছে।

এসব আদালতে প্রতিদিন গড়ে অর্ধসহস্রাধিক বিচারপ্রার্থী আসেন। বিশেষ করে তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসা বিচারপ্রার্থীদের বেশির ভাগই নারী।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিন দেখতে পেয়েছেন, এক মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে কতটা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন। মামলার কারণে সেই সকালে আদালতে আসতে হয়েছে, অথচ দুপুর গড়ালেও এত মানুষের ভিড়ে কিছুতেই ১১ মাস বয়সী সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না। শিশুর কান্না সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেন, কিন্তু বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলির ভাষ্য থেকেও স্পষ্ট হচ্ছে, ট্রাইব্যুনালে আসা মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়াতে কতটা দুর্ভোগের শিকার হন। অনেক সময় কৌঁসুলিরা মায়েদের দুর্ভোগ দেখে তাঁদের নিজ কার্যালয়ে নিয়ে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ করে দেন, কিন্তু এটা তো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

আমরা আশা করব, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যানেক্স ভবনে দ্রুত ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপন করা হবে।