যুগের পর যুগ ধরে ধীরে ধীরে একটি বন তৈরি হয়, প্রাণপ্রকৃতির নিরাপদ আবাসস্থলও হয়ে ওঠে সেটি। সে বন বিনাশ করে ফেলতে মানুষ চিন্তাও করে না। অল্প কয়েক দিন সময়–সুযোগ পেলে উজাড় করে ফেলে বিশাল বনভূমি। এর মধ্য দিয়ে হারিয়ে যায় শতবর্ষী বনও। তবে অল্প সময়েই শতবর্ষী বন ফিরিয়ে আনতে আছে একটি কৃত্রিম পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতে দেশে প্রথম বন তৈরি হয়েছে; যা বেশ আশাব্যঞ্জক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তৈরি করা হয়েছে দেশের প্রথম ‘মিয়াওয়াকি ফরেস্ট’। উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এই কৃত্রিম বন। জাপানের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকি হচ্ছেন কৃত্রিম বন সৃষ্টির এই ধারণার প্রবক্তা। তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করে মাত্র ৩০ বর্গফুটের মধ্যেও বন তৈরি করা সম্ভব।
এতে লাগানো গাছ সাধারণ বনের গাছের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। ফলে এ পদ্ধতিতে ছোট কোনো স্থানে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে গভীর বন তৈরি করা সম্ভব। অন্য সাধারণ বনের চেয়ে এই বন ৩০ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। বর্তমানে এমন বন গড়ে তুলে সুফল পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস ও ভারত।
মিরসরাইয়ে কৃত্রিম বন তৈরির প্রকল্পটির পরামর্শক ছিলেন প্রাকৃতিক কৃষিকেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও পরিচালক দেলোয়ার জাহান এবং প্রকল্পের উদ্যোক্তা হচ্ছেন আমজাদ হোসেন। আমরা তাঁদের অভিবাদন জানাই। তাঁদের গড়ে তোলা শত প্রজাতির গাছ–গুল্মে ভরা ১৩ মাস বয়সী কৃত্রিম বনটি দেখে মনে হয় এক যুগ বয়সী বন। আরও দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, যে জায়গাটিতে এ বন গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি একসময় ইটভাটার মাটি কাটা ও কালো ধোঁয়ার কারণে বিপর্যস্ত ছিল।
দেশের প্রকৃতিবিদ ও পরিবেশবিশেষজ্ঞরাও মিয়াওয়াকি ফরেস্ট মডেলে কৃত্রিম বন তৈরির প্রকল্পের গুরুত্বারোপ করেছেন। কারণ, স্থানীয় প্রজাতির গাছ দিয়ে এমন বন তৈরি করা হয় বলে দেশীয় ও স্থানীয় গাছ রক্ষায় এ বনের বড় ভূমিকা থাকে। তাঁরা মনে করেন, সরকারি ন্যাড়া পাহাড়গুলোতে আগ্রহী ব্যক্তিদের অংশীজন করে মিয়াওয়াকি ফরেস্ট সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
যেসব বনভূমি উচ্ছেদ ও দখল হয়ে গেছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি–বেসরকারি যৌথ প্রকল্পে এমন বন গড়ে তোলা হোক। দেশের বনভূমি বাড়ানোর জন্য এটিই হতে পারে কার্যকর একটি মডেল। শহর অঞ্চলেও ছোট জায়গায় এমন বন গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা আশা করি, বিষয়টিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বন বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।