মেহেরপুরের সড়কটিতে আর কত দুর্ভোগ

সম্পাদকীয়

দেশের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে যে সমালোচনাটি সবার আগে চলে আসে, তা হলো যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া। মেহেরপুরের একটি আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার নিয়েও অভিযোগ উঠেছে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়ার। এতে প্রকল্পের অর্থ অপচয় ছাড়াও সুফলভোগী মানুষ তাঁদের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসার আশঙ্কা করছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মেহেরপুরের কায়েমকাটা-কাথুলী আঞ্চলিক সড়কটি নিয়ে এক যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। আট কিলোমিটারের এই সড়কের বেশির ভাগ স্থানে ইট-খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। প্রতি বর্ষায় সড়কটি দিয়ে চলাচলে অবর্ণনীয় ভোগান্তি তৈরি হয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৯ কোটি ৪ লাখ টাকার বরাদ্দে সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়।

চলতি বছর বর্ষা আসার আগেই মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে প্রায় আড়াই মাস পেরিয়েও সড়কের কোথাও সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে সড়কে নর্দমা তৈরির প্রাথমিক কাজ কেবল শুরু হয়েছে। সেই নর্দমা নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের ভাষ্য, সড়কের যেসব স্থানে প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, সেখানে তা নির্মাণ করা হচ্ছে না, করা হচ্ছে সড়কের উঁচু স্থানে। এতে জলাবদ্ধতার কোনো সমাধান তো হবেই না, উল্টো প্রকল্পের টাকাটা গচ্চা যাবে। স্থানীয় লোকজন এ–ও আশঙ্কা করছেন, ঢিমেতালে কাজ চলার কারণে বর্ষার আগে কোনোভাবেই কাজ শেষ হবে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আবার বাড়িয়েও দুর্ভোগ শেষ হবে না।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারের বক্তব্য হচ্ছে, সওজের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নর্দমা নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি নেই। অন্যদিকে সওজের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীও দাবি করছেন, সওজ কয়েক দফা এলাকায় নর্দমা নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করেছে।

এখানে কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম হয়নি। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী জলাবদ্ধ স্থানে নর্দমা নির্মাণ নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এরপরও উঁচু স্থানে নর্দমা নির্মাণ করা হচ্ছে।

আমরা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের কথায় আশ্বস্ত হতে চাইলেও এলাকাবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্যের কারণে তা হতে পারছি না। আমরা আশা করব, সড়ক নির্মাণে এলাকাবাসীর দাবি ও সড়কের বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রকল্পটিও দ্রুত শেষ করা হবে এবং এর সুফলও নিশ্চিত করা হবে। এটি অহেতুক অর্থ অপচয়ের প্রকল্প যেন না হয়।