চট্টগ্রামে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম হচ্ছে এমন একটি শহর, যেটি একই সঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র ও নদীবেষ্টিত। প্রাকৃতিকভাবে নান্দনিক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত এমন শহর বিশ্বে কমই আছে। চট্টগ্রাম হতে পারত বিশ্বের অন্যান্য সুপরিচিত পর্যটন নগরীর একটি।

কিন্তু নামে পর্যটন নগরী হলেও দেশের বাইরে সেই সুখ্যাতি এ শহরের নেই। কারণ, এর জন্য যে নগর-পরিকল্পনা দরকার, সেটি এখানে নেই, কোনোকালে ছিলও না। বরং নদীদূষণ ও পাহাড় ধ্বংসের কারণে শহরটি তার নান্দনিকতা হারাতে বসেছে। গত কয়েক দশকে একের পর এক পাহাড় কেটে সরকারিভাবে সেখানে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে।

নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক ও অন্যান্য প্রকল্প। এ নিয়ে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যতটা কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার ছিল, তা নিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলেই চট্টগ্রামের আজ এ হাল।

সম্প্রতি শহরটির পাহাড় দখল ও ধ্বংসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একটি গোষ্ঠী, যেখানে বারবার নাম আসছে সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলরের। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তাঁর এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাহাড় কাটায় সরাসরিভাবে জড়িত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. জহুরুল আলম ওরফে জসিম। গত শনিবার নগরের আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় কেটে তাঁর লোকজন সেখানে গরুর খামার করছিলেন।

জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালান। অভিযানের সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি নিজেই এই গরুর খামার করছেন বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান। তবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নির্মাণাধীন স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয় এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কাটার পর সেখানে খামার নির্মাণ করা হচ্ছিল। এতে যেকোনো সময় পাহাড় বা নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আমরা জেলা প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কথা হচ্ছে, এভাবে অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর জহুরুলকে কি নিবৃত্ত করতে পারবে তারা?

জহুরুলের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা বহুদিন ধরে ওই এলাকায় সরকারি খাস ও রেলওয়ের পাহাড় কেটে জমি ও মাটি বিক্রি করে আসছেন। কিছুদিন আগে ওই এলাকা পরিদর্শনে গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোড়েন জহুরুলের অনুসারীরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জায়গার মালিকসহ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখানে কি সিটি করপোরেশনের কিছু করার নেই? আমরা দেখতে চাই, এই জনপ্রতিনিধির পরিবেশবিধ্বংসী এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁরা কী ভূমিকা রাখছেন।