তাঁর শিক্ষা হোক চলার পথের পাথেয়

সম্পাদকীয়

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুর পুণ্যস্মৃতির দিন হিসেবে পালিত হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। হিজরি বর্ষ অনুসারে ১২ রবিউল আউয়াল তিনি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আবার এই দিনে তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আজকের দিনটি তাই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত।

মহানবী (সা.)-এর মধ্যে করুণা, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতার মতো অনন্য সব মানবিক গুণের সম্মিলন ঘটেছিল। আরব ভূখণ্ডে এমন একসময়ে মহানবী (সা.) এসেছিলেন, যখন পুরো অঞ্চলটি ছিল কুসংস্কার, অশিক্ষা, গোষ্ঠীগত হানাহানি, ক্রীতদাস প্রথা, নারীর প্রতি চরম বৈষম্যসহ নানা রকম সামাজিক অনাচারে নিমজ্জিত। গোত্রে গোত্রে বিবাদ ও প্রাণঘাতী লড়াই চলছিল বহু বছর ধরে।

সেই ঘোর অন্ধকার সময়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আসেন আলোকবর্তিকা হয়ে। অন্যায়-অবিচার-অজ্ঞানতার আঁধার থেকে তিনি মানুষকে নিয়ে গেছেন সত্যের পথে। মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, অন্যায় থেকে ন্যায়ের পথে নিয়ে আসা ছিল তাঁর সারা জীবনের সংগ্রাম। কৈশোরেই তিনি আল আমিন বা বিশ্বাসী উপাধি লাভ করেন। আরবের বিবদমান সব সম্প্রদায় তাঁকে প্রিয় নেতা হিসেবে মেনে নেয়।

মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। ইসলামের নবী রাসুলে করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। তিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী ও রাসুল। শুধু আরব দেশ নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য তিনি শান্তি ও কল্যাণের বাণী নিয়ে এসেছিলেন। তাদের কল্যাণেই উৎসর্গীকৃত ছিল মহানবী (সা.)-এর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবন। তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ, সৎ, সত্যবাদী এক মহাপুরুষ; মানবের মুক্তি ও কল্যাণ সাধনায় যিনি জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন।

মহানবী (সা.) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা জাগানোর শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শুধু মহৎ গুণাবলি শিক্ষাই দেননি, নিজের জীবনেও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। সমাজসংস্কারক হিসেবে মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের আদর্শ। যে সমাজে কন্যাশিশুকে জীবিত কবর দেওয়া হতো, সেই সমাজে তিনি নারীর শিক্ষাকে উৎসাহিত করেছেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। শত্রুর প্রতি ক্ষমা ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

মহানবী (সা.) সৎ স্বভাব, সত্যনিষ্ঠা, সৌজন্যবোধ, বিনয় ও নম্রতার যে অনুপম শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে চর্চা করলে পৃথিবীতে আর অশান্তি ও হানাহানি থাকত না। তাই মহানবী (সা.)–এর আদর্শ অনুসরণের বিষয়টি মনেপ্রাণে লালন ও চর্চা করতে হবে; সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী এখনো করোনা মহামারির ধাক্কা থেকে গেছে। দেশে দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট চলছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। আমাদের দেশও রাজনৈতিক নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আছে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা অশান্তিও। এমন পরিস্থিতিতে আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হচ্ছে। মহানবী (সা.) শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধের যে মহান শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তাকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করলে সমাজে কোনো অশান্তি থাকার কথা নয়। মহানবী (সা.)-এর শিক্ষাই হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।