এসব কিসের আলামত

সম্পাদকীয়

একই দিনে পত্রিকায় সংবাদপত্র অফিসে হামলা ও সাংবাদিক নিগ্রহের দুটি খবর আমাদের বিচলিত না করে পারে না। সংবাদপত্র অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে খুলনায়। আর সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে কয়েক দিন আগে জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানিকে হত্যা করা হয়। এসব কিসের আলামত?

খুলনা থেকে প্রকাশিত দেশ সংযোগ পত্রিকায় গত ১৪ এপ্রিল খুলনা নগরের জুয়া, মাদকসহ নানা অপরাধের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন চার থেকে পাঁচজন অপরিচিত যুবক ওই পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলমকে গালাগালি করেন ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

ওই ঘটনায় খুলনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন সম্পাদক। পরদিন পাঁচ-ছয়জন যুবক হেলমেট ও মুখে কাপড় বেঁধে হাতে চাপাতি ও লম্বা ছোরা নিয়ে ওই পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা করেন। তাঁরা অফিসের সামনের জানালা ভাঙচুর করে চলে যান। পুরো সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

মুন্সি মাহবুব আলমের মতে, ওই সংবাদ প্রকাশ করার জন্যই এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনা নতুন নয়। যখনই কোনো খবরে স্বার্থান্বেষী মহল অথবা অপরাধী চক্রের আঁতে ঘা লাগে, তারা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশ সংযোগ পত্রিকার সম্পাদক থানা-পুলিশকে সাধারণ ডায়েরি করার পরও পত্রিকা অফিসে নিরাপত্তাব্যবস্থা না নেওয়া রহস্যজনক।

দেশ সংযাগ পত্রিকায় মাদক নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়, তাতে মাদক কারবারিদের সঙ্গে একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের যোগসাজশের কথাও ছিল। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) পক্ষ থেকে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে প্রতিবাদলিপিও দেওয়া হয়েছে। মাদক কারবারিদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশ আছে কি না, সেটা তদন্ত করলে জানা যাবে। কিন্তু দেশের আরও অনেক স্থানের মতো খুলনায়ও দেদার মাদক কারবার হয়, সেটা তো মিথ্যা নয়। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, কেএমপি তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

মাদকসংক্রান্ত খবরে কারা সংক্ষুব্ধ হয়েছে, কারা পত্রিকা অফিসে হামলা করেছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা থাকার কথা নয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্ব কি কেবল পত্রিকা অফিসে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে দায়িত্ব অস্বীকার করা? কেন তারা ঘটনার তিন দিন পরও পত্রিকা অফিসে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারল না?

অন্যদিকে গত সোমবার রাত নয়টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চায়ের দোকানে বসা নিয়ে এক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার দোস্ত মোহাম্মদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও একটি অনলাইন পোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক খালেদ মাসুদ ও উপদপ্তর সম্পাদক আরাফাত রায়হান সহযোগীদের নিয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ আছে। সাংবাদিক মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।

একের পর এক পত্রিকা অফিসে হামলা হবে, সাংবাদিকেরা মাস্তানদের হাতে নিগৃহীত হতে থাকবেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নির্বিকার থাকবে, এটা হতে পারে না। সরকারের দায়িত্ব দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তার উল্টোটাই ঘটতে দেখি। জামালপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় পুলিশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পত্রিকা অফিসে যারা হামলা চালাল, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে কেন?

দেশ সংযোগ অফিসে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।