বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের সংকট দূর করুন

রেল খাতে উন্নয়নের নামে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি। যেখানে কোনো রেলস্টেশনের প্রয়োজন নেই, ট্রেনও তেমন একটা থামে না, এমন অনেক জায়গায় বিপুল টাকা খরচ করে উন্নত রেলস্টেশন করা হয়েছে। অন্যদিকে বগুড়ার সান্তাহারের মতো ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন থাকে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত। চব্বিশ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল করা স্টেশনটিতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি, স্টেশনের বাইরে নেই কোনো শৌচাগার। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৪৭ বছরের পুরোনো রেলস্টেশনটি হয়ে প্রতিদিন পাঁচটি প্ল্যাটফর্মে যাত্রীবাহী ৪৪টি আন্তনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। দিনে-রাতে হাজারো যাত্রীর আনাগোনা থাকে এখানে। ব্যস্ত এ স্টেশনে যাত্রীদের জন্য বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। গোটা রেলস্টেশনে মাত্র একটি টিউবওয়েল। মাঝেমধ্যেই সেটি অকেজো থাকে। অথচ একসময় এখানে খাওয়ার পানির ১০টি চাপকল ছিল। 

স্টেশনটিতে দুর্ভোগের আরও বড় বিষয় হচ্ছে, সাধারণ যাত্রীদের জন্য সেখানে নেই শৌচাগারের ব্যবস্থা। ফলে যাত্রীরা, বিশেষ করে নারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

ব্রিটিশ আমলের এই স্টেশনের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। সেই অবকাঠামোয় এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। স্টেশনে নেই নিরাপত্তাপ্রাচীর। এতে পকেটমার, ছিনতাইকারী, মাদক কারবারিদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। অরক্ষিত এই স্টেশনে বিনা টিকিটের যাত্রীদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

ব্রিটিশ আমলে তৈরি বিশ্রামাগারগুলোর দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার নেই। ভিআইপি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকলেও বসার পর্যাপ্ত আসন নেই। দিনে-রাতে শৌচাগার বন্ধ থাকে। বিশ্রামাগারগুলোয়ও অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। যাত্রীদের খাবারের জন্য নেই মানসম্মত কোনো রেস্তোরাঁ। প্ল্যাটফর্মে বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলোর অধিকাংশ নষ্ট।

স্টেশনে বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম আছে। কিন্তু একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে পারাপারের জন্য পদচারী-সেতু নেই। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাতায়াত করতে হয়। রেললাইন থেকে উঁচু প্ল্যাটফর্মে ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য এক যাত্রী অন্যজনের হাত ধরে টেনে তোলেন।

রাত–দিন ব্যস্ততম একটি জংশনে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী ট্রেনে ওঠানামা করেন। এমন একটি রেলস্টেশন এভাবে অবহেলিত থাকবে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। রেলস্টেশনটিকে যাত্রীবান্ধব করে তুলতে আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হোক।