হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিও কি ব্যর্থ হবে

সম্পাদকীয়

আমাদের সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনায় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বেশি গুরুত্ব পায় বললে অমূলক হবে না। দৃশ্যমান উন্নয়ন হিসেবে মানুষের কাছে সেগুলোকে সাফল্য হিসেবে উপস্থাপন করতে সহজ হয়।

কিন্তু সেখানে শুভংকরের নানা ফাঁকি থেকে যায়। সেসব ফাঁকি থেকেই সরকারি টাকায় নির্মিত হাসপাতাল, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলসহ অসংখ্য ভবন আমরা পড়ে থাকতে দেখি। উপজেলা পর্যায়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক হাট-বাজারগুলোর ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটছে। পড়ে থাকতে থাকতে সেসব ভবন এখন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গ্রামীণ অর্থনীতিকে বেগবান করতে দেশের ৬৪ জেলার সব উপজেলা এলাকায় মোট ৫০৭টি বাজার ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। প্রতিটি বাজার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা।

বাজার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৮৭টি বাজারের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু দোকান বরাদ্দের বিধিমালা জটিলতায় একটি ভবনও চালু করা যায়নি। ফলে ভবনগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈদ্যুতিক বাতি, বেসিন, পানির কল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেঝেতে জমেছে পানি। সরকারি প্রতিবেদনেই প্রকল্পটির এসব ত্রুটি বের হয়ে এসেছে।

আমাদের হাটবাজারের দীর্ঘ একটি ঐতিহ্য আছে। কিন্তু আধুনিক সময় ও তথ্যপ্রযুক্তির এই বাস্তবতায় সেই ঐতিহ্যেও পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। কারণ, গ্রামীণ অর্থনীতির রূপটাই পাল্টে গেছে।

নতুন করে এসব হাট-বাজারকে ঢেলে সাজাতে না পারলে পণ্য বাজারজাত ও কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো হোঁচট খাবে। দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সার্বিক অর্থনীতিও। কারণ, গ্রামগঞ্জের কৃষি ও অকৃষিপণ্যের ওপর সার্বিক অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে হাট-বাজারকে আধুনিকায়নের এ প্রকল্প নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু বিশাল প্রকল্পটির এমন দুরবস্থা হবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের তিন দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তব অগ্রগতি ৫০ শতাংশের মতো। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম।

নকশা প্রণয়ন, মামলা ও ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না করে কেন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলো, সেটিই আমাদের প্রশ্ন। নির্মিত ভবনগুলো জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায়ও কেন দেরি হচ্ছে? প্রকল্পের এত বছরেও কেন বাজার বরাদ্দের কোনো বিধিমালা হলো না?

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, যাচ্ছেতাইভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশৃঙ্খল ও অপরিকল্পিত প্রকল্প মানেই অর্থ অপচয় ছাড়া কিছু নয়। ফেলে রাখা বাজারগুলো দ্রুত হস্তান্তর করা হোক। পুরো প্রকল্প নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মনোযোগ দাবি করছি। এ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।