নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রুত উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

নব্বই দশকে দেশে আর্সেনিকের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। সে সময় বাংলা ব্যাকরণ বইতেও রচনা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যা ও সমাধান। পরীক্ষার প্রশ্নেও পরিচিত হয়ে উঠেছিল এ রচনা। তবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগ এবং এ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির কারণে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে আর্সেনিকমুক্ত। গত কয়েক দশকে জনস্বাস্থ্যে আমাদের অন্যতম সাফল্য বলা যায় এটিকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের বেশ কিছু জায়গায় আর্সেনিক সমস্যা আবারও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মে মাসে শরীয়তপুর সদরে ২ হাজার ৫০০ নলকূপে উচ্চমাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত হয়। এবার রাজধানী ঢাকার অদূরেই ধামরাই উপজেলায় আর্সেনিক হানা দিয়েছে। এ নিয়ে সেখানকার মানুষ ভীত।  

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের এক প্রকল্পের আওতায় ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৪২ হাজার ৫০০ গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩২ হাজার ১০০ নলকূপের পানি পরীক্ষা করে আর্সেনিক পাওয়া গেছে ৯৭০টিতে। পুরো প্রকল্প শেষে এ সংখ্যা আরও বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিরাপদ পানি সহজলভ্য না হওয়ায় অনেক বাসিন্দা আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার করছেন। অনেকে আবার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আর্সেনিকযুক্ত নলকূপে লাল চিহ্ন দেওয়া ছাড়া কোনো সতর্কবার্তা নেই। সচেতনতা তৈরি করারও যথেষ্ট অভাব আছে।

দুই বছর আগেও উপজেলার একাধিক গ্রামের নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। সে সময় নতুন করে নলকূপ স্থাপন করা হলে সেগুলোর পানিতেও এখন আর্সেনিক ধরা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ধামরাইয়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত। কুশুরা ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলছেন, ‘সবাই ভয়ে আছি। সরকার আমাদের নতুন টিউবওয়েল দিক, না হলে কিছু একটা করুক, যাতে আমরা ভালো পানি পান করে বাঁচতে পারি।’

ধামরাইয়ের কয়েক হাজার মানুষ এখন ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। সেখানে নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঝুঁকিতে থাকা অনেকগুলো পরিবারের জন্য নিরাপদ স্থানে একটি করে গভীর নলকূপ বসানো যায়। আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ থেকে পাইপ
দিয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুকুরের পানি শোধনের মাধ্যমেও পানি সরবরাহ করা যায়। চাইলে অনেকভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া যায়। তবে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সদিচ্ছা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত জরুরি। প্রকল্প অনুমোদন থেকে বাস্তবায়নের পথে সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি গণসচেতনতা তৈরি করা। জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষকসহ স্থানীয় নাগরিক সমাজকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই।