প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রতি কেন এই অবহেলা

সম্পাদকীয়

একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিকড়ের সন্ধান দেয় সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এমন নিদর্শন দেশে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোনোটি সরকারি তদারকিতে এসেও অবহেলার শিকার আর কোনোটি পড়ে থাকতে থাকতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্যতম স্থান হচ্ছে জাদুঘর।

যেমনটি আমাদের আছে রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, উপমহাদেশজুড়ে এটির খ্যাতি আছে। কিন্তু সেটির সংস্কারকাজ করতে গিয়ে সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর যে দুরবস্থার চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের শঙ্কিত হতেই হয়।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত। জাদুঘরটিতে ১৭ হাজার প্রত্ননিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ১০০টি নিদর্শন গ্যালারিতে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলোর প্রদর্শনের ব্যবস্থা ও রাখার জায়গা নেই। ফলে সেগুলো জাদুঘরের নানা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে চলছে সংস্কারকাজ। ছয় লাখ টাকার এই সংস্কারকাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সংস্কারকাজের উল্টো ক্ষতি হচ্ছে বেশ কিছু নিদর্শনের। সংস্কারকাজের জন্য সেগুলো বারান্দার গ্যালারি থেকে নামিয়ে নিচে রাখা হয়েছে। এগুলো মেঝেতে ফেলেই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।

দেয়াল চটানোর সময় সব ধুলা প্রত্ননিদর্শনের গায়ে পড়ছিল। এমন একটি দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে সচেতন নাগরিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জাদুঘর কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা হচ্ছে, অনেক নিদর্শনের ওজন বেশ ভারী। এগুলো সরাতে গেলে যদি এর কোনো একটি কারুকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটি আর ফেরত পাওয়া যাবে না। বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন প্রশ্ন রেখেছেন, যত্নসহকারে মোটা চট দিয়ে ঢেকে রেখে সংস্কারকাজ করা উচিত ছিল। তা ছাড়া দেয়াল চটানোর সময় ইটপাথরের টুকরা পড়েও এর ক্ষতি হতে পারে। সাবধানতার সঙ্গে কাজ করা দরকার।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও একটি বিষয় উঠে এল, ১৭ হাজার প্রত্নবস্তু গ্যালারিতে রাখতে হলে এ রকম আরও একটি জাদুঘর লাগবে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু সরকারের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়।

যাঁরা বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাঁদের এ কাজে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু কথা হচ্ছে এর জন্য উদ্যোগটা তো জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। তবে জাদুঘরের সম্প্রসারণের জন্য সরকারকেই আগে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।