গ্রীষ্মকাল থেকে বর্ষাকাল—বাংলা পঞ্জিকার চার মাস ঝড়–বাদল ও বৃষ্টির দিন। এ সময় নৌ চলাচল বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এখন নৌযানই যদি নকশাজনিত ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তাহলে নিরাপত্তাঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এমন নৌযান অহরহ চলাচল করছে নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্যান্য জেলা পর্যন্ত ছয়টি নৌপথে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েও কাজ হয়নি। লঞ্চমালিকেরাও যে শর্তে এসব লঞ্চ চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন, তা মানেননি। ফলে নারায়ণগঞ্জের নৌপথগুলোয় যেকোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর সদর, মতলব, রামচন্দ্রপুর, নড়িয়া, মুন্সিগঞ্জসহ মোট ছয়টি নৌপথে এখন ৩৫টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে ৩২টিই হচ্ছে সানকিন ডেক লঞ্চ। এ লঞ্চগুলোর ডেক পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বড় ঢেউয়ের আঘাতে এসব লঞ্চ স্থির থাকতে পারে না এবং বড় কোনো নৌযানের ধাক্কায় সহজেই কাত হয়ে ডুবে যায়। ফলে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় এসব লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
এক মাস বন্ধ রাখার পর মালিকদের আবেদনে এক বছরের মধ্যে সানকিন ডেক থেকে হাইডেকে রূপান্তরের শর্তে ওই লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে গত দুই বছরেও সেই শর্ত বাস্তবায়ন করেননি লঞ্চের মালিকেরা এবং ঝুঁকি নিয়েই পুরোনো সানকিন ডেক লঞ্চগুলো চালাচ্ছেন তাঁরা। অথচ গত তিন বছরে সানকিন ডেক লঞ্চ দুর্ঘটনায় ৪৪ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে।
বিআইডব্লিউটিএর বক্তব্য, তারাও চায় ঝুঁকিপূর্ণ সানকিন ডেক লঞ্চ চলাচল বন্ধ হোক। এ ক্ষেত্রে মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নাগরিক সমাজের অভিযোগ, দুর্ঘটনায় এত মানুষের প্রাণহানির পরও বিআইডব্লিউটিএর আশকারায় এসব লঞ্চ এখনো চলাচল করছে। অর্থের বিনিময়ে লঞ্চমালিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার অভিযোগও করছেন তাঁরা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
তবে লঞ্চমালিকদের বক্তব্য, আগের মতো সানকিন ডেক লঞ্চের নকশা অনুমোদন করা হচ্ছে না। ফলে এ ধরনের লঞ্চের সংখ্যা কমে আসছে। এ ছাড়া সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা প্রসারের কারণে নৌপথে যাত্রীও কমে গেছে। এ কারণে অনেকে নতুন করে বিনিয়োগ করে সানকিন ডেককে হাইডেকে রূপান্তর করতে চাইছেন না।
নারায়ণগঞ্জের এসব নৌপথ এখনো বেশ জনপ্রিয়। যার কারণে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সানকিন ডেক লঞ্চে করেই কয়েক হাজার যাত্রী চলাচল করেন। নিরাপদ নৌযান চলাচল নিশ্চিত করাসহ যাত্রীসেবা ও সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে এসব নৌপথের যাত্রীরা আরও বেশি আকৃষ্ট হবেন। লঞ্চমালিকেরা বিনিয়োগ করতেও দ্বিধা করবেন না। কিন্তু কোনো অজুহাতে সানকিন ডেক লঞ্চ চলাচলের সুযোগ নেই। বিআইডব্লিউটিএকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় তাদের ওপরেই বর্তাবে।