জোড়াতালি দিয়ে চালু করা কেন

আমরা যখন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি, তখন দেশের স্বাস্থ্যসেবার চিত্রটি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি দেশের চিকিৎসাসেবার আদর্শ প্রতিষ্ঠান হতে পারত, সেটি যাত্রার শুরুতেই হোঁচট খেল সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণে। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ ডিসেম্বর থেকে বহিঃসেবা চালু হয়। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য ১ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৫০ জনের মতো। এ নিয়োগে বিএসএমএমইউর উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেছেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা শুনেছি। সেখানে নিয়োগে একটি শক্তিশালী কমিটি করা হবে; যেখানে উপাচার্য থাকবেন না। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে আমরা এটি করতে যাচ্ছি।’

এর আগে বিএসএমএমইউতে উপাচার্যের আত্মীয়দের নিয়োগ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বিএসএমএমইউ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের বেশি কিছু করার নেই বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা–ও গ্রহণযোগ্য নয়। 

বিএসএমএমইউকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর খেয়ালখুশিমতো চলবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান চলে আইন ও বিধি দ্বারা। কেউ সেই আইন অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে না, এমন কোনো কথা লেখা নেই বিশ্ববিদ্যালয় আইনে। প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসিত হলেও জনগণের করের অর্থে পরিচালিত হয়। অতএব সেই অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ হলো, সেটা জানার অধিকার তঁাদের আছে। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বিশেষায়িত এই হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করেনি। এখন পর্যন্ত কোনো রোগীও ভর্তি করতে পারেনি তারা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, বিশেষায়িত এ হাসপাতাল চালু করার জন্য মে মাসে উচ্চপর্যায়ের চারটি সভা হয়েছে। ১ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতাল চালু করতে বলা হয়েছে। এখন চাপে পড়ে জোড়াতালি দিয়ে হাসপাতালটি চালুর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত সেবা দেওয়াই এই হাসপাতালের উদ্দেশ্য। এখানে রোগীর রক্তের নমুনা ল্যাবরেটরিতে যাবে যন্ত্রের মাধ্যমে, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট চলে আসবে চিকিৎসকের কম্পিউটারে।

 যখন হাসপাতালের জন্য অতি আবশ্যকীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, অবকাঠামোও প্রস্তুত আছে, তখন রোগী ভর্তি করতে বা সেবা দিতে বিলম্ব কেন? প্রতিবছর গড়ে আট লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে চিকিৎসার উদ্দেশে্য যান এবং এতে লাখ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পুরোপুরি চালু হলে বিদেশে রোগী যাওয়া কিছুটা হলেও কমবে। সরকার উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা ফলাও করে প্রচার করে। অথচ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো সেকেলে। এ অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে নয়, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি চালু করা হোক।