র‌্যাগিং-বুলিংয়ের ব্যাপারে কঠোর হোন

সম্পাদকীয়

ক্যাফেটেরিয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষেধ, ফুলহাতা শার্টের হাতা গোটানো নিষেধ, জোরে কথা বলা বা হাসা নিষেধ। এসব নিষেধ অমান্য করলে, নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস শেষ হওয়ার পরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লাসে আটকে রাখা, গালাগাল করা, বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করা ছাড়াও ক্যাম্পাসের ভেতরে কোথাও ডেকে নিয়ে হয়রানি করার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী।

প্রথম আলোর সাংবাদিক জানাচ্ছেন তাঁর সামনেই দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরের ক্লাসের তিনজন ছাত্র। কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্র তাঁদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন তাঁর কাছে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. আমানউল্লাহ একজন। তাঁকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন তাঁর বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। ফুলহাতা জামার হাতা গুটিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরেছেন, এই হলো তাঁর ‘অপরাধ’। স্থাপত্য বিভাগের একজন শিক্ষার্থী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের কাছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে ১৬ আগস্ট থেকে। দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা সবে ক্যাম্পাসে পা রেখেছেন। এর মধ্যেই তাঁদের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক।

এর আগে ২০২০ সালে আইনজীবী ইশরাত হাসান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং-বুলিং বন্ধে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষত সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধিভুক্ত কলেজে র‌্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন। র‌্যাঙ্কিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের জরুরি সাহায্য ও দ্রুত প্রতিকার দিতে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যদি আদালতের এই নির্দেশনা মেনেই থাকে, তাহলে তো ছাত্রদের ভোগান্তি হওয়ার কথা নয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক শরীফ হাসান একরকম আত্মসমর্পণ করেছেন এই অন্যায়ের কাছে। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য তাঁরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করেন। তাঁদের পরামর্শ দিয়েও সাহায্য করেন। তবু র‌্যাগিং-বুলিং কমিয়ে আনা যাচ্ছে না।

র‌্যাগিং-বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মানসিক সমস্যায় ভোগেন। সেই মানসিক ক্ষত সারা জীবন বয়ে বেড়ান। আমরা দেখেছি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন কীভাবে র‌্যাগিংয়ের নামে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।

উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি আবারও লেখাপড়ায় ফিরেছেন। অভিযুক্ত ছাত্রীরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, আদালতের নির্দেশ যখন কর্তৃপক্ষ মেনেছে, তখনই শুভ কিছু ঘটেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আমরা একই উদ্যোগ আশা করব।