সংস্কারের পর দেবে যাওয়ার ব্যাখ্যা কী

সম্পাদকীয়

সড়ক অবকাঠামো প্রকল্প কতটা যা-তা করে শেষ করা যায়, তার একের পর এক নজির স্থাপন করে চলেছেন ঠিকাদারেরা। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে ভূরি ভূরি সংবাদ প্রকাশিত হলেও তাতে কারও কোনো হেলদোল দেখা যায় না।

সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি সংস্থা থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—সবাই যেন স্বাধীন ও সার্বভৌম। যেন কারও কাছেই তাদের দায় নেই, জবাবদিহির প্রয়োজন নেই। তা না হলে কেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায় সংস্কারের মাত্র কয়েক দিনের মাথায় সড়ক দেবে যাবে, আর তৈরি হবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ইন্দুরকানির টগরা-ইন্দুরকানি-কলারণ-সন্ন্যাসী সড়কটি উপজেলার প্রধান সড়ক। চার মাস আগে সংস্কার শেষ হওয়া এই সড়কের প্রায় ৩০০ ফুট জায়গা প্রথমে ফাটল ধরে, এরপর দেবে যায়। এতে এই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দেবে যাওয়া অংশে চাকা পড়ে গাড়ি উল্টে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

উপজেলার প্রধান সড়ক হওয়ায় এই পথ ধরে উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে, হাসপাতাল, হাটবাজার ও ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ সড়ক দিয়ে লোকজন যাতায়াত করেন। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ ৫০০ যানবাহন চলাচল করে।

প্রতিবেদনের সঙ্গে যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে সদ্য সংস্কার হওয়া সড়কটি কতটা বেহাল। সড়কটির ঘোষের হাট এলাকায় কয়েকটি স্থানে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ফাটলের কারণে সড়ক দেবে গেছে।

কোথাও গর্ত হয়ে গেছে। সড়কটি দিয়ে একটি গাড়ি চলাচল করলে আরেকটি গাড়িকে অপেক্ষা করতে হয়। একসঙ্গে দুটি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সড়কের একাংশ দেবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করার সময় হেলে যায়।

প্রায় তিন মাস ধরে সড়কটি যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তা মেরামতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের শঙ্কা, সড়কটির ফাটল ধরা অংশ দ্রুত সংস্কার করা না হলে খালে বিলীন হয়ে যাবে।

‘সড়কের ওই অংশে খালের ভাঙনের কারণে ফাটল ধরেছে’ বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) পিরোজপুর কার্যালয় যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা এককথায় বাজে ওজর। বাংলাদেশে শত শত কিলোমিটার সড়ক খাল কিংবা অন্য জলাশয়ের পাশ দিয়েই নির্মিত হয়। সংস্কারের এক মাসের মাথায় দেবে গিয়ে সেসব সড়ক খালে বিলীন হয়ে যায় না।

ইন্দুরকানির প্রধান সড়কটির দেবে যাওয়া অংশ দ্রুত সংস্কার করুন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করুন।