গ্যাস-তেল অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিগত সরকারের আমলে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের নামে শত শত কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় করার কঠোর সমালোচনা করেছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ সরকার দেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।

আমরা ফাওজুল কবির খানের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ে বিদ্যুৎ–সংকট কাটাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বেসরকারি খাতে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। কিন্তু সেটা তো অনন্তকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আমরা বহুবার ক্যাপাসিটি চার্জ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। ক্যাপাসিটি চার্জ হলো এমন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক বা না হোক, কেন্দ্রের মালিককে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হবে। 

তৎকালীন সরকার উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়নি। তারা নিজেদের অনুগ্রহভাজন ব্যক্তিদের দিয়েছে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য। এ জন্য দায়মুক্তি আইনও পাস করিয়েছে। 

বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে যে দুর্নীতির মচ্ছব ঘটেছে, তার পেছনেও রয়েছে ২০১০ সালের দায়মুক্তি আইন। সরকার এমন কোনো আইন করতে পারে না, যা বৈষম্যমূলক এবং কাউকে বেশি সুবিধা দেয় আর কাউকে বঞ্চিত করে।

উল্লেখ্য, ফাওজুল কবির খান জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, ‘আমরা এই আইন আর কন্টিনিউ করব না। এই আইনের অধীন যেসব চুক্তি হয়েছে, তার পর্যালোচনার জন্য কমিটি করে দিয়েছি। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। নতুন করে কোনো কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তি বাড়ানো হবে না, হচ্ছে না। এ বিষয়ে যথাযথ চিন্তা করেই পিডিবিকে সিদ্ধান্ত বলে দিয়েছি, তারা ১৬ বছর খাইছে, আর না। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে দাম বেড়েছে।’

আমরা জ্বালানি উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। অন্যান্য খাতের মতো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি খাতেও যে লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে, সেটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। জনগণকে বিদ্যুৎ–সেবা দেওয়াই যদি আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে দায়মুক্তির আইন করল কেন? রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে শত শত কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় খাত থেকে অপচয় করার এখতিয়ার কারও নেই। আমরা মনে করি, এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি।

আওয়ামী লীগ সরকার মাটি ও সমুদ্রের নিচের গ্যাস-তেল উত্তোলনের চেষ্টা না করে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত তৈরি করেছে। এতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষ লাভবান হলেও খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ নাগরিকদের। জ্বালানি উপদেষ্টা নতুন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র অনুসন্ধানে সরকার দ্রুত উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন। কাজটি যত দ্রুত শুরু হবে, ততই মঙ্গল বলে মনে করি।

জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরেই মাটির নিচে ও সমুদ্রের তলদেশে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তা আমলে নেননি; বরং তাঁরা জ্বালানি আমদানির নামে একশ্রেণির মানুষকে কমিশন–বাণিজ্য করার সুবিধা করে দিয়েছেন। আর পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বিদেশ থেকে কম দামে তেল কিনে এনে জনগণের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছেন।

নির্বাহী আদেশে নয়, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম যদি সমন্বয় করতে হয়, সেটা করতে হবে বিইআরসির মাধ্যমে। গণশুনানি হলে সিস্টেম লসের নামে এই খাতে যে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে, সেটা সম্পর্কে জনগণ জানতে পারবে।