শুধু খাল উদ্ধার নয়, নিয়মিত তদারকি দরকার

সম্পাদকীয়

ঢাকা শহরের খালগুলো উদ্ধার নিয়ে নানা সময়ে নগরবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়ে যান দুই সিটির অভিভাবক। খালগুলো ঘিরে রাজধানীতে নৌপথ তৈরির কথাও আমরা শুনে থাকি। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের খাল উদ্ধারের তৎপরতা চোখে পড়ার মতোই। তিনি খাল উদ্ধার করেন, প্রশংসিতও হন। কিন্তু উদ্ধার করা খাল তদারকের বেলায় ঘাটতি থেকে যায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি খাল এখন হেঁটেই পার হওয়া যায়। আবর্জনার স্তূপ জমে আরও চারটি খালে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। হেঁটে পার হওয়া যায়—এমন খালগুলো হচ্ছে রূপনগর খাল, দ্বিগুণ খাল (পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং), সাংবাদিক কলোনি খাল (পল্লবী) ও কল্যাণপুর মূল খাল (গাবতলী)। পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া খালগুলো হলো কাটাসুর, রামচন্দ্রপুর এবং কল্যাণপুর ক ও চ। অথচ মেয়র আতিক কয়েক দফায় উদ্যোগী হয়ে গত বছর খালগুলো সংস্কার করেছিলেন। কিন্তু বছর না যেতেই এগুলো ফিরে গেছে আগের সেই রূপে।

উত্তর সিটিতে কল্যাণপুরে বড় একটি জলাধার রয়েছে, সেটির অবস্থাও করুণ। মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আগারগাঁও ও মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির পানি রামচন্দ্রপুর ও কল্যাণপুর মূল খাল হয়ে জলাধারটিতে যায়। জলাধারটি পুরোটাই এখন কচুরিপানায় ঢাকা।

জলাধার ও আটটি খালের এমন পরিস্থিতিতে নগর-পরিকল্পনাবিদেরা আগামী বর্ষায় ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন। গত বছর টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে গোটা ঢাকা শহর কীভাবে ডুবে গিয়েছিল এবং নগরবাসীকে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ভোগে ফেলেছিল, তা ভোলার নয়।

অথচ উত্তর সিটির সব কটি খাল ও জলাধার সংস্কারে গত কয়েক বছর খরচ করা হয় ৬১ কোটি টাকা। কিন্তু এর সুফল কি পেয়েছেন নগরবাসী? মেয়র আতিকের বক্তব্য, খাল রক্ষার দায়িত্ব শুধু সিটি করপোরেশনের নয়; সেই দায়িত্ব নিতে হবে নগরবাসীকেও।

কথা হচ্ছে, খালগুলো সংস্কারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের সিটি করপোরেশন কতটা সচেতন করতে পেরেছে? ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ স্থানীয় নাগরিক, সুধীজন, পরিবেশকর্মী, তরুণসমাজ ও সামাজিক সংগঠন নিয়ে খাল রক্ষায় কেন একটি কমিউনিটি গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না? একটা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ছাড়া খাল সংস্কার করে যে কোনো লাভ নেই, চারটি খাল তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। ঠিকাদার দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে জটিলতা ও লোকবলসংকটের কারণেও খালগুলো ঠিকঠাক পরিষ্কার করা হচ্ছে না। সীমানাখুঁটি বসানোর কাজও সম্পূর্ণ হয়নি।

শুধু খাল উদ্ধার ও সংস্কার নয়, সেই খালে পানিপ্রবাহ যাতে ঠিক থাকে, সেটাও তদারক করতে হবে। তা না হলে খাল রক্ষা করা সম্ভব নয়। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে উত্তর সিটির নগরবাসীকে মেয়র মহোদয় কতটা স্বস্তি দেন, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।