হালদার প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব নেবে কে

সম্পাদকীয়

মিঠাপানির গাঙ্গেয় ডলফিনের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত হালদা নদী। স্তন্যপায়ী ডলফিন নদীর বাস্তুসংস্থান রক্ষার জন্য অপরিহার্য। প্রকৃতি সংরক্ষণের জোট আইইউসিএন ২০১২ সালে গাঙ্গেয় ডলফিনকে মহাবিপন্ন প্রজাতি বলে ঘোষণা করে। কিন্তু অভয়াশ্রমেই ঝুঁকিতে পড়েছে ডলফিনের জীবন। এর কারণ হলো হালদা নদী এবং এর প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর নানামুখী ঘোষণা সত্ত্বেও বাস্তবে তার অনেকগুলোই দৃশ্যমান নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দিন দিন হালদা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ডলফিনের জন্য। গত পাঁচ বছরে নদীটিতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৯টি ডলফিন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ছয়টি ডলফিনের মৃতদের পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নৌযানের প্রপেলারের আঘাতে, বালু-পাথর পরিবহনের ইঞ্জিনচালিত নৌকা-বাল্কহেড ও বালু তোলার ড্রেজারের আঘাতে এবং দূষণ, লবণাক্ততা ও জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে ডলফিনগুলো। গত পাঁচ বছরে যতগুলো ডলফিন মারা গেছে, তার অর্ধেকের বেশি আঘাতজনিত মৃত্যু। আবার ডলফিন ধরে হত্যার ঘটনাও ঘটে। হালদা নদীতে মহাবিপন্ন প্রাণীটির মাত্র ১৪৭টি এখন টিকে রয়েছে।

হালদা নদীতে যেসব কারণে ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে, তার সবই প্রতিরোধের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা রয়েছে। নদীতে মৎস্য শিকার, ইঞ্জিনচালিত নৌযান ও বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। নদীদূষণ বন্ধেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘোষণা রয়েছে। অথচ হালদা নদী রক্ষার ঘোষণা ও বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যে ব্যবধান যে বিস্তর, ডলফিনের একের পর এক মৃত্যুই তার বড় প্রমাণ।

স্থানীয় ভাষায় উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানি। হালদার পানি যাতে দূষিত হয়ে মাছ, ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের অনুপযোগী না হয়, সেদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

হালদায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা ঘোষণা করা হলেও সেটা নিয়মিত দেওয়া হয় না।

ফলে চুরি করে তারা নদীতে জাল পাতছে। মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসন ছাড়া মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নদীতে জাল পাতা বন্ধ করা মোটেই সম্ভব নয়। আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতো সরকারি সংস্থাও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে বালু পরিবহনের জন্য হালদার ওপর দিয়েই বাল্কহেড চালাচ্ছে।

মৎস্য প্রজননের প্রাকৃতিক উৎস হওয়ায় হালদা নদীর বৈশিষ্ট্যটিও অনন্য। হালদা নদী ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

হালদা নদীকে ডলফিন ও মাছের সত্যিকারের নিরাপদ অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরানোর প্রকৃত দায়িত্ব নেবে কে?