পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ আটকে আছে কেন

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকাটা কেবল অস্বাভাবিক নয়, অমানবিকও।

পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সাড়ে তিন বছর পরও তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়নি।

এ পদে শুধু নারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ ছিল, যাঁদের নিয়োগের পর ১৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠপর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, প্রজননস্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, সাধারণ রোগীসহ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা। পরিদর্শিকার এতগুলো পদ বছরে পর বছর খালি থাকায় স্বাস্থ্যসেবাপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বর্তমানে ৭ হাজার ৬২১ জন নারী প্রার্থী চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষায়, যাঁদের অধিকাংশই বিবাহিত। এ পদের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে জেলা সিভিল সার্জন দ্বারা শারীরিক সুস্থতা ও অন্তঃসত্ত্বা নয় মর্মে সনদ জমা দিতে হবে।

অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হবে। প্রথমত, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাত নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, চাকরিতে যোগদানের সময় অন্তঃসত্ত্বা থাকা যাবে না। চাকরিতে এমন কোনো শর্ত থাকতে পারে না, যাতে নারীর মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের সমতা থাকবে।

মৌখিক পরীক্ষায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের সবাই চাকরি পাবেন না। একটি অংশ বাদ পড়বে। বাদ পড়া প্রার্থীরা অন্য কোনো চাকরির চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় জানা যাচ্ছে না কারা বাদ পড়ছেন।

পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদের চূড়ান্ত ফলাফলের দাবিতে রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সারা দেশ থেকে শতাধিক চাকরিপ্রার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন এবং সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয় কত দূর? কয়েক মাস আগে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও কেন ফলাফল মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকবে? মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা ফল পাওয়ার পরও কেন সেটা প্রকাশ করলেন না? এর ভেতরে কোনো রহস্য আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। একটি নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে তিন বছরের বেশি সময় লাগতে পারে না। যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের সবাই চাকরি পাবেন না। কিন্তু ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগে তো বলা যাচ্ছে না, কারা চাকরি পাচ্ছেন, কারা পাচ্ছেন না।

কেবল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নয়, সরকারের অনেক বিভাগেই চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও ফল প্রকাশে বিলম্বের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের যেমন কারসাজি আছে, তেমনি আছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের খামখেয়ালিও।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, চাকরিপ্রার্থীদের মানববন্ধনের পর অন্তত কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফিরে আসবে এবং অবিলম্বে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাজে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে যঁাদের কারণে ফল আটকে থাকল, তঁাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।