সরকারি সব স্কুল কেন এমন হয় না

সম্পাদকীয়

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা থেকে টৈটং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে আরও ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু এই দূরত্বটুকু পেরোলেই যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখা মিলবে, তার তুলনা পাওয়া ভার। প্রথম আলোর খবর বলছে, স্কুলের উঠানে ফলফলাদি ও ঔষধি গাছের সমারোহ আছে।

দেয়ালজুড়ে মনীষীদের বাণী, তাঁদের ছবি। আছে সততা স্টোর, যেখানে মূল্য পরিশোধ করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রয়োজনমতো পণ্যসামগ্রী কিনতে পারে। গ্রন্থাগারও আছে। লেখাপড়ায়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে, খেলাধুলায় সবকিছুতেই তারা সেরা। তাদের এই সাফল্যের পেছনে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীদের কঠোর অধ্যবসায় আছে। ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে নিতে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা স্কুল কার্যক্রমের বাইরে বিনা মূল্যে বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করেছেন।

আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে আসা শিশুরা লেখাপড়া করে। ওদের অভিভাবকদের অনেকের পক্ষে সন্তানদের লেখাপড়ায় বাড়তি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। সহশিক্ষা কার্যক্রমে অবদান রাখার সুযোগও তাঁদের কম। এই স্কুলটাই তাঁদের জন্য ভরসা। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা থেকে টৈটং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তেমন এক ভরসার নাম হয়ে উঠেছে অভিভাবকদের কাছে।

কিন্তু অল্প কিছুদিন আগে শিক্ষা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের ‘ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট ২০২২’-এর যে তথ্য, তা খুবই হতাশাজনক। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার অবস্থা খুবই সঙিন।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৬১ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ গণিতে দুর্বল। এমনকি অর্ধেক শিক্ষার্থী ঠিকমতো বাংলা লিখতে ও পড়তে পারে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা স্কুলের বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ে, তারা শিখনে এগিয়ে আছে অনেকটা।

মোটাদাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিশুরা যথেষ্ট যত্ন পায় না। পেলে তাদের গণিত ও বাংলায় এত দুর্বল হওয়ার কথা নয়। স্কুলগুলোয় শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষের সংকট তীব্র। গ্রন্থাগার, নাচ-গান, ছবি আঁকা, খেলাধুলার ব্যবস্থা তো দূর কি বাত।

এর আগে প্রথম আলোতেই ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গরিবই রয়ে গেল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করুণ দশা ফুটে ওঠে। বেশির ভাগ স্কুলেই শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, বিশুদ্ধ পানি এমনকি পর্যাপ্তসংখ্যক শৌচাগারও নেই। মাত্র তিনজন শিক্ষক আছেন, এমন স্কুলও আছে।

আমরা চাই আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকদের দারিদ্র্য না থাকুক, পেকুয়ার এই বিদ্যালয়ের মতো ছাত্রছাত্রীরা আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলায় এগিয়ে যাক। সব শিশুর জন্য যেদিন রাষ্ট্র এমন স্কুলের ব্যবস্থা করে দেবে, সেদিন আর বাংলাদেশের অগ্রগতি রুখতে পারবে না কেউ।