বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বুঝিয়ে দিতে দেরি কেন

সম্পাদকীয়

বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই অসচ্ছল এবং পরিবার নিয়ে অভাব-অনটনে থাকেন। তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে এ সরকার গোটা দেশে ‘বীরনিবাস’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে নানা সময়ে আমরা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার খবর হতে দেখি।

শরীয়তপুরে ২০২০ সালে বীরনিবাস প্রকল্প হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম পর্যায়ে জেলায় ৬৪ বীর মুক্তিযোদ্ধা, এরপর ২২১ বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য বীরনিবাস বরাদ্দ করা হয়। এ পর্যায়ের বীরনিবাসের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের মে-জুনে, তা ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু অন্তত ৩০টি বীরনিবাসের নির্মাণকাজ এখনো শেষ করা হয়নি, ৪০-৫০ শতাংশ কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। কয়েকটির নির্মাণকাজ এখনো শুরুই করা হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে এসব অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিপাকে পড়েছেন। প্রয়াত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ফুলমতি বেগম বলেন, ‘আমরা তো সারা জীবন টিনের ছাপরায় কাটিয়েছি। সরকার পাকা ভবনে বসবাস করার স্বপ্ন দেখাইছে। ঘরটি অর্ধেক নির্মাণ করে এক বছর ধরে ফেলে রাখছে।’ বর্তমানে থাকার জায়গা না থাকায় অসমাপ্ত বীরনিবাসে পাটকাঠির ছাপরা তুলে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি।

বীরনিবাসগুলো নির্মাণ করছেন স্থানীয় ঠিকাদারেরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ঠিকাদারকে প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। এখন নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে বীরনিবাস তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি তাঁদের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের কাছে অর্থ চাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বীরনিবাস নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদস্যসচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে কয়েকটি ঘরের কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় তালিকা সংশোধনের কথা বললেন।

কিন্তু বাকি আরও ঘর নির্মাণ কেন ফেলে রাখা হয়েছে বা এখনো কাজই শুরু করা হয়নি? প্রকল্প তদারকিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির গাফিলতিই কি এখানে প্রকাশ পাচ্ছে? দুই পর্যায়ে বেশির ভাগ বীরনিবাস নির্মাণ হয়ে গেলেও শেষের দিকে কিছু ঘরের কাজ কেন ঝুলে থাকবে?

ঠিকাদারদের সঙ্গে বসে দ্রুত বাকি বীরনিবাসগুলোর কাজ শেষ করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে আমরা আহ্বান জানাই। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারকে সব কটি ঘর বুঝিয়ে দিয়ে শরীয়তপুরের এ প্রকল্প সফলভাবে সমাপ্ত করা হবে, সেটিই প্রত্যাশা থাকল।