কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। সেখানকার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও তেমনটিই চান যেকোনো নাগরিক। কিন্তু আদতে আমরা কী দেখি?
জনগণের সেবা করার বিষয়টি কাগজে-কলমেই থেকে যায়। কোনো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান যেন হয়রানি আর ভোগান্তিরই সমার্থক হয়ে আছে। এ ছাড়া নাগরিকদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। তবে নীলফামারীতে যা ঘটেছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। সেখানে জাল দলিল চক্রের খপ্পরে মানুষ জমি হারাচ্ছে। সাবরেজিস্ট্রার, স্থানীয় থানা-পুলিশের কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ চক্র গড়ে উঠেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত পাঁচ-ছয় বছরে নীলফামারীর ডিমলার ১০ ইউনিয়নের ৪ শতাধিক বাসিন্দা এ জালিয়াত চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। চক্রটির সঙ্গে ডিমলার সাবেক ও বর্তমান সাবরেজিস্ট্রার, থানার সাবেক ওসি, পাঁচ-ছয়জন দলিল লেখক, একজন স্থানীয় সাংবাদিক ও একজন আইনজীবী জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাও সেই চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
চক্রটির একেকজন একেক ধাপে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে কোণঠাসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে জমি। যেমন কারও কাজ হচ্ছে, জাল দলিল তৈরি করা বা প্রকৃত জমির মালিককে দখলদার হিসেবে সাব্যস্ত করা, কারও কাজ সেই জমি আরেকজনের কাছে বিক্রি করা। আবার ভুক্তভোগী থানায় গেলে সেখানে গিয়েও প্রতিকার পান না। সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তার কাজ হচ্ছে, ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি দেখানো। এমনকি এক ভুক্তভোগীকে হত্যাচেষ্টার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ডিমলার সাবেক সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুণ্ডু হচ্ছেন এ চক্রের প্রভাবশালী সদস্য। একবার তিনিসহ আরও কয়েকজনের নামে মামলার নির্দেশও দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক। কিন্তু পুলিশ তখন রামজীবন ছাড়া অন্যদের গ্রেপ্তার করলেও পরে তাঁরা জামিনে বের হয়ে যান।
রামজীবন এখন রংপুর সদর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার। আর চক্রের পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম এখন পঞ্চগড়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক। দুজনই অবশ্য জালিয়াতির কোনো ঘটনার সঙ্গে নিজেরা জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।
চক্রের দুই সদস্য বদলি হয়ে গেলেও ভূমি অফিসের এ হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধ হয়নি। কারণ, বর্তমান সাবরেজিস্ট্রার মনীষা রানীর নামেও একই অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে জমি জালিয়াতি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
আগে ও বর্তমানে যাঁরাই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছেন এবং জমি দখল করে নিঃস্ব করেছেন, যথাযথ তদন্ত করে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ডিমলার সাবরেজিস্ট্রার অফিসকে জালিয়াত চক্র থেকে মুক্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।