সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মারপিটের ঘটনা দুঃখজনক

সম্পাদকীয়

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে যে মারপিটের ঘটনা ঘটল, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দীর্ঘ ঐতিহ্য থাকলেও কয়েক বছর ধরে এর ব্যতিক্রমও আমরা লক্ষ করেছি।

কিন্তু এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন (২০২৪-২৫) নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যে মারপিট ও হামলার ঘটনা ঘটল, তা নজিরবিহীন। ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হাঙ্গামা তৈরি, ভোট গণনার আগেই একজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য করা, বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালানো, একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অনেকের আহত হওয়ার ঘটনা ছিল খুবই উদ্বেগজনক।

সুপ্রিম কোর্টের চারজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, শফিক আহমেদ, জেড আই খান পান্না ও ড. শাহদীন মালিক এ ঘটনাকে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন হলো, আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এ ঘটনা কেন ঘটল? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, যত দিন আইনজীবীরা পেশাকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে পেরেছেন, তত দিন আদালত অঙ্গন শান্তিপূর্ণই ছিল। দলীয় ও উপদলীয় রাজনীতির কারণেই এই অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।

আইনজীবীদের দলীয় রাজনীতি করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কিন্তু আদালত অঙ্গনে সেই দলীয় রাজনীতি টেনে এনে আদালত অঙ্গনকে কলুষিত করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কয়েক দিন আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়েও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

এবারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ কেবল সরকার ও বিরোধী দলের অনুসারীদের মধ্যে সীমিত ছিল না। নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে সরকার সমর্থক প্যানেলে ঠাঁই না পেয়ে নাহিদ সুলতানা নামের একজন আইনজীবী আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনের পর ভোট গণনা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ সময় বিএনপি সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। একপর্যায়ে নাহিদ সুলতানার নির্দেশে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সরকার সমর্থক আইনজীবীদের ওপর হামলা করেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে, ফল গণনার আগেই তিনি নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়েরকে বাধ্য করেছেন তাঁকে জয়ী ঘোষণা করতে।

সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানার পাশাপাশি বিএনপি সমর্থক প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন আক্রান্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফ। এই মামলার পর পুলিশ রুহুল কুদ্দুসকে গ্রেপ্তার করে চার দিনের রিমান্ডে নিলেও হামলা ও জোর করে বিজয়ী ঘোষণার মতো অভিযোগের মূল অভিযুক্ত রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ ঘটনার পেছনে যে আরও অনেকে ছিলেন, তিনজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়াই তার প্রমাণ। একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় তিন সহকর্মীর অব্যাহতি প্রমাণ করে সরকারদলীয় আইনজীবীদের বিরোধ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসও মুক্ত নয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল থেকে দেখা যায়, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টি পদই আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা পেয়েছেন। সভাপতিসহ ৪টি পেয়েছেন বিএনপির সমর্থকেরা। বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে কেউ কেউ পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন।

গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন ঠিকমতো হয়নি। এর প্রভাব এখন অন্য ক্ষেত্রেও পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ রকম পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে।