শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি যৌক্তিক

সম্পাদকীয়

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জ্বালানি তেলের ওপর ধার্য শুল্ক প্রত্যাহার করে দাম কমানোর যে দাবি জানিয়েছেন, তা যৌক্তিক।

তিনি ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক চিঠিতে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিকে বহুমাত্রিক চাপে ফেলবে। কৃষি, পণ্য পরিবহন, উৎপাদনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে এবং জনজীবনের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেবে।’

উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের ওপর বর্তমানে মোট ৩৪ শতাংশ কর (শুল্ক ১০ শতাংশ, মূসক ১৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ) আরোপিত আছে।

দেশের অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতির চিঠিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক করোনা মহামারির ধকল সামলে যখন পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও জাহাজ বা পরিবহন ভাড়া প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি জ্বালানি তেলের (ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন, পেট্রল) মূল্য গড়ে ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গণপরিবহন ও কৃষি খাতে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

জনজীবনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। গণপরিবহনে ভাড়া বেড়েছে ২২ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। অনেক পরিবহন সংস্থা নির্ধারিত হারের চেয়েও বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকেই বহন করতে হচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি যথার্থই বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানি পণ্যের দামও বেড়ে যাবে এবং তাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি সরকার সারের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেকখানি বেড়ে যাবে। চলতি বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় কৃষককে আরও বেশি সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। সামনে শীতের মৌসুমে সবজি ও বোরো চাষ প্রায় পুরোটাই সেচের ওপর নির্ভরশীল। ফলে সেচে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের দাম না কমালে কৃষিও ঝুঁকিতে পড়বে।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে যে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন, বিভিন্ন মহল থেকে আগেই তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় শিল্প, কৃষি খাতসহ সার্বিক অর্থনীতিতে যে অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে বাংলাদেশেও কমানো হবে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।

এ অবস্থায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির দাবির সঙ্গে আমরাও একমত হয়ে বলতে চাই, জ্বালানি তেলের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক-কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হোক। বর্তমানে জ্বালানি তেলের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক-কর ধার্য করা আছে। আর দাম বাড়ানো হয়েছে গড়ে ৪২ শতাংশ।

সে ক্ষেত্রে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করলে বর্ধিত দামের ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব। বিভিন্ন সময় চাল-পেঁয়াজসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত কর কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে তা কেন করা হবে না?