কর্তৃপক্ষের চোখ কি খোলা আছে

সম্পাদকীয়

খালের দেড় কিলোমিটারে ২৪ সেতু’ প্রথম আলোর এই খবর পড়লে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কর্তৃপক্ষ জিনিসটা কী? তাদের চোখ কি আদৌ খোলা আছে? কারণ, এই ২৪ সেতুর ১৫টি নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।

তা ছাড়া খালের ওপর শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পাকা দালান নির্মাণে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সায় আছে বলেও জানিয়েছেন কেউ কেউ। আর ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলী সূজা বলছেন, খাল দখল সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। ব্যক্তিগতভাবে খালের ওপর সেতু নির্মাণ পরিবেশসম্মত নয়। শিগগিরই তাঁরা দখলকারীদের উচ্ছেদে নামবেন।

কে কাকে উচ্ছেদ করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। কিন্তু এই রেষারেষিতে পড়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা। বাঁধের কারণে খালের পানি শুকিয়ে গেছে। এ কারণে জুলেখার বিল, সুন্দরখালী, চৌদ্দগড়, শুদ্রকান্দি ও চাঁচড়া বিল এলাকায় বোরোচাষিরা বীজতলায় পানি দিতে পারছেন না। তাঁদের ক্ষতির দায় কে নেবে? দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), প্রশাসন, নাকি পৌরসভা?

ভোলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ঘুরে এসেছেন। তিনি দেখেছেন, পরানগঞ্জ-ভোলা-চরফ্যাশন আন্তমহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলছে। সেখানেও শ্রমিকেরা তিনটি জায়গায় বাঁধ দিয়েছেন। খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এর কিছু অংশ একরকম ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

আর কিছু অংশে এলাকাবাসী সেতু বানিয়েছেন, কাঁচা-পাকা ঘর তুলেছেন। খালের ধার ঘেঁষে যে গাছপালা ছিল, সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। মাটি ফেলে কোথাও কোথাও ভরাটও করা হয়েছে। এতে খালের প্রস্থ কমে যাচ্ছে। ভোলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেছেন, বাপ্তা খালের তীরে তাঁরা গাইড ওয়াল বা সড়ক সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছেন। এই বাঁধ দখল করে স্থানীয় লোকজন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সেতু নির্মাণ করছেন। দখলমুক্ত করার জন্য তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন যে বলল শিগগিরই তারা খাল উচ্ছেদে নামবে, সেই ‘শিগগিরই’টা কবে? আর নির্বাহী প্রকৌশলী থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশই-বা কী করল?

গেল সপ্তাহে আমরা নাটোরের চলনবিলের সংযোগ খালে বাঁধ দেওয়ার খবর পেয়েছিলাম। ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে বাঁধ দিয়ে অন্যায়ভাবে জেলে আর কৃষকদের ইজারা দেওয়া হচ্ছিল; অর্থাৎ উত্তরে যান বা দক্ষিণ, আমাদের নদীনালা-খাল-বিল নিয়ে একই রকম স্বেচ্ছাচারিতা আর অবহেলা দেখা যাবে।

অথচ খালসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ আদালত কিছু দিন পরপরই সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছেন। ২০১৪ সালে হাইকোর্ট দেশের সব খাল, খেলার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে চার সচিবসহ পাঁচজনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা সরকারের নির্বাহী বিভাগ কি ধরেই নিয়েছে যে তাদের এককালীন নির্দেশই যথেষ্ট?