সারা বছর ধরেই চলে গাছ কাটা। সরকারি প্রকল্প বা বেসরকারি অবকাঠামো বাস্তবায়নে প্রথম শিকার হয় গাছ। কিন্তু যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, সেই পরিমাণে কি নতুন করে লাগানো হয়? একটা সময় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নামে ঘটা করে গাছ লাগানো হতো, এখন এমন কর্মসূচি আগের মতো চোখে পড়ে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে কি পরিবেশসচেতনতা কম?
তবে আমরা প্রায় সময়ই এমন প্রবীণ বৃক্ষপ্রেমী মানুষের কথা জানতে পারি, যাঁরা সারা জীবন ধরে গাছ লাগিয়ে গেছেন, এখনো সেই কাজই করে যাচ্ছেন। পরিবেশ রক্ষায় তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার এক প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা সেরাজুল ইসলাম হাওলাদার। ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব আটখালী গ্রামের এই প্রবীণ স্থানীয়ভাবে বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন।
৮০ বছর বয়সী সেরাজুলের বিশ্রামের সময় নেই। কারণ, গাছ লাগানোর প্রতি তাঁর অসীম নেশা। সড়কের পাশ, অন্যের বাড়ি—যেখানেই খালি জায়গা পান, গাছের চারা লাগান তিনি। ফলদ, ঔষধিসহ সব প্রজাতির গাছ লাগান। গাছের পরিচর্যাও তিনি করেন। ২০ বছর ধরে আনন্দ নিয়ে তিনি কাজটি করে যাচ্ছেন।
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন সেরাজুল। এরপর গ্রামে এসে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেন। সেই কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর গাছ লাগানো শুরু করেন তিনি। তবে ১০-১১ বছর বয়সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সময় থেকে গাছ লাগানোর প্রতি ঝোঁক তাঁর।
এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন বলে দাবি করেন সেরাজুল। তিনি জানান, ডাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তিনি নারকেল, সুপারি, পেয়ারা, জাম্বুরা, গাবগাছ ছাড়াও তালগাছ, মেহগনি, চাম্বল, সুন্দরীগাছও লাগিয়েছেন। তাঁর নিজের বাড়িতে সুন্দরীগাছ রয়েছে।
একসময় নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বাজার থেকে চারা কিনে রোপণ করতেন। অর্থের অভাবে এখন গাছের চারা কিনতে না পারায় বাড়িতেই চারা উৎপাদন করছেন তিনি। সেরাজুল ইসলামের বক্তব্য, ‘সড়কের পাশে গাছ লাগিয়েছি পথিককে ছায়া দেওয়ার জন্য। গাছ লাগালে পরিবেশও ভালো থাকে। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো জায়গা ফেলে রাখা যাবে না।’ তাঁর মতো এই উপলব্ধি হোক আমাদের সবার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল-হেলাল বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেরাজুলকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা ও বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে গাছের চারা ও গাছ লাগানোর সরঞ্জাম দেওয়া হবে।’ আমরা উপজেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। সেরাজুল ইসলামের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রইল।