দেড় কোটি টাকা অপচয়ের জবাব কী

সম্পাদকীয়

সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে দায়িত্বরত কর্মীর কাজের মূল্যায়ন প্রশ্নে যে বিষয়টি সর্বাগ্রে অতিগুরুত্বের সঙ্গে পরিগণনায় রাখা হয়, সেটি হলো কর্মস্থলে তাঁর হাজিরার ক্ষণ এবং উপস্থিতিকালের ব্যাপ্তি। শিক্ষকতা এ চিরায়ত মূল্যায়ন–প্রক্রিয়াবহির্ভূত কোনো পেশা নয়। পাঠদান–সংশ্লিষ্ট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা তথা শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নের স্বার্থেই শিক্ষকের বিদ্যালয়ে আগমন ও বিদ্যালয় থেকে নির্গমনের সুনির্দিষ্ট ক্ষণের নথিভুক্তি জরুরি।

তথ্যপ্রযুক্তিপূর্ব জমানায় কর্মীর আগমন-নির্গমন ক্ষণের নির্ভুল উপাত্ত সংরক্ষণ দুরূহ ছিল। কিন্তু আজকের এ প্রযুক্তিঋদ্ধ যুগের বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরাযন্ত্র সেই প্রক্রিয়াকে জলবৎ সহজ করে দিয়েছে। এ যন্ত্রে অঙ্গুলিছাপের মাধ্যমে শিক্ষকের দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা বার্ষিক আগমন-নির্গমনের বিশদ তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে সংরক্ষিত হতে পারে। সেই মহতী লক্ষ্য নিয়ে জেলায় জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতি পরিগণনায় হাজিরাযন্ত্র বসানো হয়েছিল। কিন্তু সে প্রযুক্তিব্যবস্থার সুফল কতটা ঘরে তোলা গেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ কারণে যে বহু জায়গায় বহু অর্থ ব্যয়ে স্থাপিত এ যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে।

প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, শরীয়তপুর জেলার ৬৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরাযন্ত্র কোনো কাজে আসছে না। অধিকাংশ বিকল হয়ে পড়ে আছে। দু–একটি সক্রিয় থাকলেও তা ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ যন্ত্র ব্যবহারে শিক্ষক কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তাদের আগ্রহ আপাত-অদৃশ্য। অথচ এ যন্ত্র স্থাপনে সরকারি তহবিলের দেড় কোটি টাকার কার্যত শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পর্যবেক্ষণে সব পক্ষের আন্তরিক অনাগ্রহই এর মূল কারণ।

প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য থেকে আন্দাজ হয়, আগমন-নির্গমনের ক্ষণ পর্যবেক্ষণে কর্তাদের অনাগ্রহ যতই থাকুক, এ যন্ত্র ক্রয় ও স্থাপনে তাঁদের আগ্রহের কমতি ছিল না। সরকারি অর্থে যন্ত্র ক্রয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের পকেটে নগদ নারায়ণের নিশ্চিত উপস্থিতি যে সেই আগ্রহের সম্ভাব্য কারণ, তার জন্য কষ্টকল্পনার দরকার হয় না।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কক্ষে হাজিরাযন্ত্রগুলো স্থাপন করা হয়। বার্ষিক স্লিপ ফান্ডের খরচ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় করে এসব যন্ত্র বসানো হয়। বর্তমানে হাজিরাযন্ত্রটি শিক্ষকদের কক্ষের দেয়ালে বসানো আছে। কোনো শিক্ষক সেটি ব্যবহার করছেন না। শিক্ষা কর্মকর্তারাও হাজিরাযন্ত্র চালু রাখা ও তার তথ্য সংরক্ষণ করার তাগিদ দেন না। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তাদের স্বীয় করণীয় উপলব্ধি করা জরুরি।