কারখানার বর্জ্য কোনোভাবেই নদীতে নয় 

মাছে–ভাতে বাঙালি—এ অঞ্চলে জনগোষ্ঠী ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বহুল প্রচলিত প্রবাদ–প্রবচন। এর মানে এ–ও দাঁড়ায়, একসময় এই বাংলার মাঠভরা ধান হতো আর বিল–পুকুর–নদীভরা মাছ ছিল। আবহমান বাংলার চিত্র এখন বদলে গেছে। সেই বাস্তবতা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পও মনে হতে পারে। উন্নয়নের ভুল দর্শন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়নে অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন জমির পরিমাণ কমছে। কৃষিজমির মাটি চলে যাচ্ছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটের ভাটায়। আর জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছেই, নদী–খাল দূষণে ও দখলে বিপর্যস্ত। সেগুলো হয়ে পড়ছে মাছশূন্য। অনেক মাছ বিলুপ্তও হয়ে গেছে। এর মধ্যে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীতে বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে উঠতে দেখি আমরা। শিল্পকলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীর পানিতে মিশতে থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেঘনা নদীর দুই পাশে গত সোমবার থেকে বিপুল পরিমাণ মরা মাছ ভেসে উঠছে। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে জাটকা, কাঁচকি, চেউয়াসহ নানা দেশি মাছের পোনা। ভেসে উঠছে মৃত জলজ প্রাণী। মরা মাছের স্তূপ পড়ে আছে মেঘনাপারে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এত মরা ছোট মাছ কখনো নদীর কিনারায় ও তীরে আগে দেখেননি তাঁরা। তাঁদের ভাষ্য, পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। এ জন্য স্থানীয় জেলেরাও কিছুদিন ধরে জাল ফেলে মাছ পাচ্ছেন না। 

স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারাও পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের মতে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানা থেকে ফেলা বিষাক্ত বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। ওই দূষিত পানি মেঘনায় মিশছে। এতে মেঘনার পানি অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে। দূষণ ও বিষক্রিয়ায় পানিতে কমছে অক্সিজেন ও অ্যামোনিয়ামের পরিমাণ। এতে বেশি হারে মারা যাচ্ছে ছোট জাতের মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। এখন নদীর এমন দূষণ ও বিষক্রিয়ার ফলে মাছের অভাব দেখা দেবে। আরও বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য। 

এ কথা অনস্বীকার্য যে এখনো অনেক শিল্পকারখানা চলছে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা (ইটিপি) ছাড়াই। ইটিপি চালু রাখা বাধ্যতামূলক থাকলেও সেই নিয়ম অনেকেই মানছে না। রাসায়নিক বর্জ্য ও পদার্থ নদী ও খালে ফেলা হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার শিল্পকলকারখানাগুলোর কোনো বর্জ্য যাতে নদী ও খালে না পড়ে, সে ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং জরুরি। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় নয়। আমাদের নদীগুলো বাঁচাতে হবে।