রামুতে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

যে কাজ দেখার দায়িত্ব যে কর্মকর্তার, সেই কাজের ক্ষেত্রে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে অনিয়ম চলার পর যদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাই উদাসীন থাকেন এবং চোখে আঙুল দিয়ে অনিয়মটি তাঁকে দেখিয়ে দেওয়ার পরও তিনি যদি ‘তাই নাকি?

অভিযোগ পাইনি তো!’ বলে বিস্ময়ক্লিষ্ট স্বরচিত মেকি অজ্ঞতাকে সামনে আনেন, তখন তা আর অনিয়মের তথ্যের অভাবকে বোঝায় না। বোঝায় দায়বদ্ধতা, কর্তব্যবোধের অভাবকে।

ঠিক একইভাবে নিজের এলাকার বনভূমিতে কী হচ্ছে, তা জানাই যাঁদের কাজ, সবার চোখের সামনে সেই বনভূমির ৬০ থেকে ৭০ একর এলাকা (যা কিনা হাতি ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম) সাফ করার ঘটনা যখন তাঁদের বিবেচনায় দ্রষ্টব্য নয়, তখন এই ঘোর জনবিরোধী কুকর্মের তাঁরাও অংশীদার বলে প্রতীয়মান হওয়াটা যথার্থ ও যৌক্তিক হয়।

কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইন্দা খোন্দকার পাড়ার পশ্চিমের পাহাড়ে এই কুকর্ম ঘটে চলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সামনেই। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য ও শরীরী ভাষায় মনে হওয়ার জো নেই, সেখানে এ ধরনের কিছু ঘটছে। বাস্তবতা হলো সেখানে বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে চলছে মৎস্য, পোলট্রির খামার ও ফল-সবজির বাগানের কাজ। ইতিমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ একরের বনাঞ্চল সাবাড় করা হয়েছে।

সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে পুকুর খনন, বাঁশের খুঁটি টেনে বিদ্যুৎ-সংযোগ, রাসায়নিক দ্রব্য ও আগুনে গাছপালা ধ্বংস এবং শ্রমিক দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ফলের গাছপালা রোপণ, প্লট আকারে জায়গাজমি বেচাবিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বনভূমির মতোই নীরব বন বিভাগ। তাদের সেই নিষ্ঠুর নীরবতার কারণে হাতির বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। পাখির আবাসস্থল নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে বনের জীববৈচিত্র্য।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে স্থানীয় লোকজনের বরাতে বলা হয়েছে, বন বিভাগের অসাধু কর্মচারীদের ম্যানেজ করে কয়েক মাস ধরে গাছপালা উজাড় ও পুকুর খননের কাজ শুরু করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আজিজুল হক। তাঁর সঙ্গে আবু তাহের ও সাইদুল আলমের নেতৃত্বে স্থানীয় আরও কয়েকজন প্রভাবশালী যুক্ত হয়েছেন।

অথচ ওই বনভূমিতে ১২৭ প্রজাতির পাখি, অসংখ্য জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। সেখানে বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠলে জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের চুপ থাকা কী অর্থ বহন করে, তা তারাই বলতে পারবে।

সংকীর্ণ স্বার্থের নেশার ঘোরে থাকা আজিজুল, তাহের, সাইদুলের মতো হাতে গোনা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বন বিভাগের কতিপয় লোক বনকে পণ্য হিসেবে না দেখে সামাজিক বাস্তুতন্ত্র বা ‘সোশিও-ইকোলজিক্যাল সিস্টেম’ হিসেবে দেখবেন, তা আশা করা বৃথা। কিন্তু বৃহত্তর জনস্বার্থে তাঁদের প্রতিহত করতে ওপর মহলে কেউ না কেউ আছেনই—এমনটা আশা করা যেতেই পারে।