জাজিরার মেয়র কি ধরাকে সরা জ্ঞান করেন

সম্পাদকীয়

দেশের সব সিটি করপোরেশন, বিভাগীয়, জেলা ও পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরও যেখানে প্রাকৃতিক জলাধারের অন্তর্ভুক্ত, সেখানে শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার একটি খাল ভরাট করা হচ্ছে। ২০২০ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে সুস্পষ্ট করে বলা আছে, এসব এলাকায় জলাধারের প্রকৃতি ও শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ জাজিরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও মেয়র খাল ভরাট করে সেখানে বাজার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, জাজিরা পৌর এলাকার লঞ্চঘাট থেকে ব্যাংক মোড় পর্যন্ত ৮০০ মিটার খাল খনন করা হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে। কয়েক বছর ধরেই খালটি দখল ও ভরাট করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তিনটি স্থানে খালের ওপর দিয়ে সড়কও নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি খালটির জাজিরা বাজার ব্যাংক মোড় এলাকায় ৩০০ মিটার অংশ বালু ফেলে ভরাট করেছে জাজিরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ওই স্থানে কাঁচাবাজার বসানো হবে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড—সবার চোখের সামনেই বছরের পর বছর ধরে খালটি দখল আর ভরাটের কাজ চলছে। অথচ সবাই অন্ধের মতো চোখে ঠুলি পরে আছে। আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিজেই খালটির কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার আয়োজন করেছে।

অথচ বৃষ্টি হলেই জাজিরা পৌরসভায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পৌর এলাকার বৃষ্টি ও বন্যার পানি কীর্তিনাশা নদীতে নেমে যাওয়ার মাধ্যম এই খাল। খালটি ভরাট করে ফেলা মানে, নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারা। বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর অনুরোধ উপেক্ষা করে সেই কাজই করছেন পৌর মেয়র।

এ কাজের পেছনে মেয়রের যুক্তিরও অভাব নেই। আগের মেয়র খালের একটা অংশ ভরাট করেছিলেন, বাজারে কাঁচাবাজার ও দুধ বিক্রির কোনো জায়গা নেই, দোকানিরা রাস্তার ওপরই পণ্য বিক্রি করেন, তাতে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের সমস্যা হয়, খাল ভরাট করে ফেললে বছরে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব প্রভৃতি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যথারীতি খাল ভরাটের ঘটনা জানে না বলে জানিয়ে দায়টা চাপিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের ঘাড়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কোনো খাল ভরাট করে বাজার তৈরি করা হচ্ছে, এমন তথ্য পৌরসভা থেকে আমাদের জানানো হয়নি। শিগগিরই খালটি অবৈধ দখলদারমুক্ত করা হবে ও ভরাট বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

একজন জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও যেভাবে খালটি ভরাট করে বাজার করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা নিঃসন্দহে দেশের সম্পদ রক্ষায় তিনি যে শপথ নিয়েছেন, তার বরখেলাপ। এটা ধরাকে সরা জ্ঞান করার একটা দৃষ্টান্ত। অবিলম্বে খালটি ভরাট করা বন্ধ করতে হবে। দখল করা খাল উদ্ধার এবং পুনরায় খনন করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।