বজ্রপাত নিরোধে এমন স্থাপনা আরও হোক

সম্পাদকীয়

প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়। কারণ, এ সময়টাতে কালবৈশাখী হয়। বছরে প্রায় দেড় শ মানুষের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। যদিও বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়ে থাকে।

আর বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক এবং হাওরে কাজ করতে গিয়েই এসব কৃষক মারা যান। দেশি-বিদেশি নানা গবেষণা থেকে এসব তথ্য আমরা জানতে পারছি। বজ্রপাত নিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি বা কৌশলগতভাবে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশ এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে আছি আমরা। এখানে কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয় না, উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা টেকসই হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের হাওর এলাকায় বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায়, সেখানে গিয়ে পড়ে। বৃক্ষহীন হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে। ফলে কৃষকই বজ্রপাতের শিকার হন তখন। ফসল ফলাতে গিয়ে বজ্রপাতের আঘাতে একের পর এক কৃষক মারা যাবেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এমন পরিস্থিতিতে হাওরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ‘কৃষকছাউনি’ স্থাপন হতে পারে ভালো একটি সমাধান। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরের পূর্ব সিংগুর এলাকায় এমন একটি কৃষকছাউনি স্থাপন করা হয়েছে স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে। প্রখর রোদ, ঝড়–বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় হাওরের জমিতে কাজে থাকা কৃষক ও শ্রমিকদের বিশ্রাম-আশ্রয়স্থল এটি। ঘরটিতে বসার জন্য রয়েছে পাকা বেঞ্চ, নলকূপ। স্থানীয় সচ্ছল ও প্রবাসী ব্যক্তিরা এ কৃষকছাউনি নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। এ ছাউনিতে ২০-২৫ জন বসতে পারেন।

কৃষকছাউনিটি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষকছাউনি হাওরের অন্যান্য এলাকার লোকজনের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। তিনি যথার্থই বলেছেন। তবে পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, দেশে এটিই প্রথম কৃষকছাউনি নয়।

এর আগে গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরও কৃষকছাউনি তৈরি করা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি বিভাগের আর্থিক সহযোগিতা ও অর্থায়নে। যেমন ২০২০ সালের মার্চে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমন একটি কৃষকছাউনি তৈরি করেছিল উপজেলা কৃষি অফিস। তখন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেছিলেন, সুন্দরগঞ্জে এ ধরনের আরও ৪৯টি ছাউনি স্থাপন করা হবে। কিন্তু গতকাল প্রথম আলোর গাইবান্ধার প্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে আর কোনো কৃষকছাউনি নির্মাণ করা হয়নি।

হাকালুকি হাওরে কৃষকছাউনি নির্মাণের জন্য উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানাই। সরকারিভাবেই দেশের গোটা হাওর অঞ্চলে এমন ছাউনি নির্মাণ করা হোক। মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিভাগ একসময় যে উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটিকে বেগবান করতে আমরা আহ্বান জানাই।