দুর্ঘটনার আগেই ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ এখন শতভাগ বিদ্যুতের দেশ। দুর্গম কিছু পাহাড়ি ও চরাঞ্চল ছাড়া দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এটি অবশ্যই সরকারের বড় অর্জন। এ খাত নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সুফল পাচ্ছে মানুষ।

তবে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার কারণে অনেক জায়গায় সঞ্চালন লাইনে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনের কারণে নানা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার একটি গ্রামে এমন ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনের কারণে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

কুলাউড়ার জয়চণ্ডী ইউনিয়নের গ্রামটিতে বিদ্যুতের কোনো খুঁটি ছাড়াই বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সুপারিগাছ ও বাঁশের ওপর দিয়ে তার টেনে গ্রামটিতে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও ঝুঁকিপূর্ণ লাইনটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলা সদর থেকে গাজীপুর চা-বাগানে যাওয়ার পাকা সড়কের পাশে গাজীপুর গাঙপাড় গ্রামের অবস্থান। সেখানে গোগালিছড়া নদীর পারে শতাধিক পরিবারের বসবাস। বেশির ভাগ পরিবার দরিদ্র। সেখানে ৭০০ মিটার জায়গায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কোনো খুঁটি নেই। বিভিন্ন বাড়ির সুপারিগাছ ও বেড়ায় লাগানো বাঁশ-কাঠের খুঁটির ওপর ভর করে ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানানো হয়েছে। ঝোড়ো বাতাসে প্রায়ই লাইন ছিঁড়ে পড়ে। তখন গ্রাহকেরা চাঁদা তুলে স্থানীয় মিস্ত্রিদের দিয়ে লাইন মেরামত করান।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) আওতায় পড়েছে জায়গাটি। এলাকাবাসী বলেন, কয়েকটি পাকা খুঁটি স্থাপন করে লাইন টানার বিষয়ে চার-পাঁচ বছর আগে তাঁরা বিউবোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ সময় খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। এর পর থেকে লাইনটি এভাবে পড়ে রয়েছে। ঘুষ না দেওয়ার কারণে এভাবে একটি লোকালয়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাখা হবে, তা খুবই দুঃখজনক।

ঝুঁকিপূর্ণভাবে টানা সঞ্চালন লাইন একধরনের মৃত্যুফাঁদ। গ্রামবাসী ছাড়াও বিউবোর কর্মীরাও এর শিকার হতে পারেন। ফলে নিরাপদ গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থেও ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন থাকতে দেওয়া উচিত হবে না বিউবোর।

বিউবোর কুলাউড়া বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করছি, দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ওই এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যার নিরসন করা হবে।