একসময় দেখা যেত শিশু-কিশোর বা অল্প বয়সীরা বাস, মিনিবাস বা লেগুনার চালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। যে কারণে শিশুশ্রম আইন, ২০১৩-এ ১৮ বছরের নিচের সবার জন্য গাড়ির চালকের সহকারীর কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন অল্প বয়সীরা আর চালকের সহযোগী থাকছে না, সরাসরি চালকের আসনেই বসে যাচ্ছে।
কোনো ধরনের সনদ বা অনুমতিপত্রও তাদের নেই। মূলত কেউ দেখার নেই বলে সেটি লাগছেও না। এমন দৃশ্য দেশের প্রতিটি শহরের হলেও গাজীপুরে সেটি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেখানকার তাকওয়া পরিবহনের ২৫০টি মিনিবাস চালানোর রুট পারমিট থাকলেও মূলত চলছে পাঁচ শতাধিক। এসব মিনিবাসে চালক ও তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর।
চালকের ওপরই নির্ভর করে যাত্রীদের নিরাপত্তা। সেখানে চালকের সুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। সড়কে বিআরটিএর সেসব নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা নিয়ে আমাদের হতাশ হতে হয়। ফলে তাকওয়ার মতো পরিবহন কোম্পানিগুলো ‘রাস্তার রাজা’ বনে গেছে বলা চলে। পুলিশ সূত্রেই জানা যাচ্ছে, গত জুলাই মাসে অন্তত ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে তাকওয়া পরিবহনের মিনিবাসে।
এসবে প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের, আহত হয়েছে অনেকে। বাসভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় চালকের সহকারীর ধাক্কায় এক যাত্রীর মৃত্যুও হয়। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, এ পরিবহনের মিনিবাসে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। স্বামীকে মারধর করে চলন্ত বাসে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও আছে। এসব ঘটনায় পরিবহনটির বেশ কয়েকজন চালক, সহকারী ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই একটি পরিবহনের চিত্রই বলে দিচ্ছে, আমাদের গণপরিবহনব্যবস্থা কতটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
একক কোনো মালিকানা না থাকায় পরিবহনটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি সুলতান সরকার। পরিবহন সমিতির নেতাদের প্রভাব ও দৌরাত্ম্যের কথা আমাদের কারোরই অজানা নয়। যতই অভিযোগ আসুক, সেগুলোকে অস্বীকার করাই তাঁদের রেওয়াজ। কোনো ধরনের নিয়মনীতিকে তোয়াক্কাও করেন না তাঁরা। যার কারণে সুলতান সরকার বলতে পারছেন, চালক ও সহকারীর মধ্যে কোনো শিশু-কিশোর নেই। এমনকি ফিটনেস ও রুট পারমিট ছাড়া কোনো মিনিবাসও চলছে না।
শুধু তাকওয়া পরিবহন নয়, জেলাটির বিভিন্ন পথে চলাচলকারী অনেক মিনিবাসের চালক অদক্ষ কিশোর। সহযোগীরা প্রায় সবাই শিশু বয়সী। তাদের কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে।
এভাবে অদক্ষ শিশু-কিশোর চালক ও সহকারীদের হাতে যাত্রীদের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলার কী যুক্তি থাকতে পারে! একইভাবে শিশু-কিশোরদের জন্যও বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিআরটিএর কোনো দায়দায়িত্ব নেই? তাদের এ নির্বিকার অবস্থান কোনোভাবেই কাম্য নয়।