সরকারি প্রতিষ্ঠানটি কি অবহেলায় ধ্বংস হবে

সম্পাদকীয়

খামার ব্যবসায় এখন আগ্রহী হচ্ছেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা। তাঁদের সাফল্যে বড় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে সরকারি মুরগি প্রজনন খামার। কিন্তু রাজবাড়ীতে এমন একটি প্রতিষ্ঠান অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

 প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, প্রায় তিন একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ীর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার একসময় এ অঞ্চলের ডিম, মাংস উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। অথচ এখন তা জরাজীর্ণ অবকাঠামো, জনবলসংকট ও আমলাতান্ত্রিক উদাসীনতায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ১৪ জনের জায়গায় কাজ করেন মাত্র ৫ জন। এ অবস্থায় কোনো সরকারি স্থাপনা টিকে থাকতে পারে না। দুঃখজনক হলো, এই বিপর্যয়ের দায় কেউ নিচ্ছে না, বরং বছরের পর বছর সমস্যা দেখেও চোখ বন্ধ করে আছে কর্তৃপক্ষ।

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে বন্ধ হয়েছে হ্যাচারি সেবা। এর পর থেকে খামারটি শুধু নামেই ‘প্রজনন’ খামার। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি, জেনারেটর, পানির পাম্প থেকে শুরু করে গাড়ি—সবকিছু অব্যবস্থাপনায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শেডগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম, কর্মচারীদের আবাসিক ভবন বসবাসের অনুপযোগী, পানির ট্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ, এমনকি পরিত্যক্ত ঘরগুলো এখন মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল।

এদিকে বাজারের তুলনায় কম দামে মুরগির বাচ্চা পাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখানে ভিড় করেন। কিন্তু খামারের উৎপাদন সামান্য হওয়ায় অধিকাংশই খালি হাতে ফিরে যান। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও নিয়মিত বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত না করলে এই খামার কখনোই পুনরুজ্জীবিত হবে না। অথচ বছরের পর বছর শূন্য পদ পূরণের আবেদন ধুলায় পড়েই থাকে। বরাদ্দ না থাকায় জরাজীর্ণ শেডগুলো সংস্কারও করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো শুধু একের পর এক আশ্বাস দিয়ে দায় সারছে। এমনটা চলতে পারে না। জরুরি ভিত্তিতে এই খামারের পূর্ণ সংস্কার, জনবল নিয়োগ, হ্যাচারি আবার চালু এবং নষ্ট যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজবাড়ীর এই গুরুত্বপূর্ণ খামারকে অব্যবস্থাপনার বেদিতে বলি দেওয়া আর চলতে পারে না। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে খামারটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে আর বেশি সময় লাগবে না।

রাজবাড়ীর এই খামার শুধু মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের কেন্দ্রই নয়, স্থানীয় বাজারে মুরগির সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা, দরিদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সাশ্রয়ী দামে মুরগির বাচ্চা দেওয়া, যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি—সবকিছুতেই এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সঠিকভাবে চালু হলে এটি জেলার প্রাণিসম্পদ খাতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো আর দেরি না করে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেবে। যথাযথ সংস্কার, জনবল নিয়োগ ও হ্যাচারি চালুর মাধ্যমে এই খামারকে আবারও লাভজনক ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে।