দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি করে শাস্তি কার্যকর করুন

সম্পাদকীয়

২০১৮ সালের নির্বাচনের দিন রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সংঘটিত দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ ধরনের অপরাধের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হন না, রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিলম্বে হলেও এ রায়কে আমরা স্বাগত জানাই।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চার সন্তানের জননীকে (৪০) মারধর ও দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এই রায়ে প্রমাণিত হলো, অপরাধীরা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, অপরাধ করলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। অনেকে এই বিচারকে যুগান্তকারী বলেও অভিহিত করেছেন। কিন্তু ন্যায়বিচারের এই বার্তা অপরাধীদের মধ্যে চৈতন্য ফিরিয়ে আনতে পেরেছে, সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কেননা, যেদিন সুবর্ণচরের আলোচিত ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণা করা হলো, তার এক দিন পরই একই উপজেলার চর কাজীমোকলেস গ্রামে এক মা ও তাঁর কিশোরী মেয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুই ঘটনার মধ্যে অদ্ভুত যোগসূত্র হলো ক্ষমতার দাপট। প্রথম ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও তাঁর সহযোগীরা আছেন। দ্বিতীয় ঘটনায় যে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আবুল খায়েরও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনিই সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে চুরির নাটক সাজান।

সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর থানা সূত্রের বরাত দিয়ে এর আগে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সাল থেকে ৩ বছর ২ মাসে সুবর্ণচরে ৩০টি ধর্ষণ ও ৭১টি ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ২০১৮ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে ২৪টি এবং ২০২০ সালে ৩১টি মামলা হয়। গত দুই বছরে সেখানে আরও অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বিচার হয়েছে খুব কমই। মানবাধিকারকর্মীরা জানান, বিভিন্ন এলাকার লোক চরাঞ্চলে বসতি স্থাপন করায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট। ফলে অপরাধমূলক ঘটনাও বেশি ঘটে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে থানার দূরত্ব অনেক হওয়ায় সব ক্ষেত্রে মামলা হয় না।

অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা মামলা না করে ভুক্তভোগীদের সমঝোতা করতে বাধ্য করে। ফলে প্রকৃত পক্ষে সেখানে কী পরিমাণ অপরাধ ঘটে, তা জানা যায় না।

২০১৮ সালে সুবর্ণচরের নারী ধর্ষণের ঘটনার বিচার হয়েছে নিম্ন আদালতে। আমরা আশা করব, দ্রততম সময়ে আপিল নিষ্পত্তি করে অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা হবে। এতে ভুক্তভোগীরা যেমন ন্যায়বিচার পাবেন, তেমনি ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও অনেকাংশে কমে যাবে।

ক্ষমতার আশ্রয়ে–প্রশ্রয়ে থেকে ভবিষ্যতেও যাতে কেউ অপরাধ সংঘটিত করতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।