জায়গা দখল ঠেকাতে রাজউক কী করছে

সম্পাদকীয়

রাজধানী ঢাকা শহরের জলাশয় বলতে এখন টিকে আছে ছোট–বড় কিছু লেক। কয়েক দশকে হারিয়ে গেছে অসংখ্য পুকুর আর খালগুলোর পরিণতি নিয়ে তো ব্যাখ্যার কিছু নেই। এখন টিকে থাকা লেকগুলোর অবস্থাও সঙিন। বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে এমনিতেই গুলশান লেক নিয়ে সেখানকার অনেক বাসিন্দা চরমভাবে দুর্ভোগের শিকার। এখন দেখা যাচ্ছে, লেকটির জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছেন ক্ষমতাসীন দলের সংযোগী সংগঠনের নেতারা। এর জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেও ঢাল বানিয়েছেন তাঁরা। লেকের জায়গা দখলের এমন প্রচেষ্টা উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বনানীর কড়াইল বস্তির কুমিল্লাপট্টি অংশে কয়েক মাস ধরে ইট–কংক্রিটের টুকরা ও ময়লা–আবর্জনা ফেলে লেক ভরাট করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু জায়গা ভরাটও হয়ে গেছে, দেওয়া হয়েছে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও। সেখানে টাঙানো হয়েছে একটি মাদ্রাসার ব্যানারও। ব্যানারে লেখা রয়েছে, মাদ্রাসাটি উদ্বোধন করবেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মফিজুর রহমান (মফিজ) এবং তাঁতী লীগের বনানী থানার সভাপতি মমিন সরকার। অভিযোগ উঠেছে, এই মমিন সরকারই মূলত মাদ্রাসার ব্যানারে লেকের জায়গাটি দখল করতে নেমেছেন। তাঁকে কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবেই স্থানীয় লোকজন জানেন।

গুলশান লেকের মহাখালী অংশে কড়াইল বস্তিকে ঘিরে লেক দখলের ঘটনা নতুন নয়। লেকের অংশ ভরাটের কৌশল হিসেবে ফেলা হয় বর্জ্য এবং রাতারাতি সেখানে ঘর তুলে ফেলা হয়। এখানে বস্তি নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণে অনেকের সঙ্গে যুক্ত আছেন মমিন সরকারও। সেখানে বস্তিঘর ভাড়া দেওয়া ছাড়াও অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগের ব্যবসাও আছে তাঁর। তিনি উত্তরা এলাকায় থাকলেও তাঁর নামে একটি কার্যালয়ও আছে বস্তির কুমিল্লাপট্টিতে।

মমিন সরকারের দাবি, যেখানে মাদ্রাসা হচ্ছে, সেটি লেকের নয়, বস্তির জায়গা। আর কাউন্সিলর মাদ্রাসার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে গেছেন। কিছুদিনের ভেতর নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু হবে। অন্যদিকে কাউন্সিলর মফিজুর রহমান বলছেন, লেকের অংশটি কারা ভরাট করেছেন, তা তিনি জানেন না। সেখানে কিছু ঘর আছে, সেগুলো মাদ্রাসার নামে বাসিন্দারা দিয়ে দিচ্ছেন, তিনি সেটিই জানেন।

গুলশান সোসাইটির বক্তব্য, গুলশান লেকের পাড়ে হাঁটার রাস্তা (ওয়াকওয়ে) নির্মাণে আদালতের নির্দেশ থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কাজটি করছে না। ফলে মহাখালী অংশে লেকটি ক্রমান্বয়ে দখল ও সংকুচিত হচ্ছে এবং চোখের সামনেই সেটি ঘটছে।

রাজউক চেয়ারম্যান বলছেন, গুলশান লেক ভরাটের বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। তাঁরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে জায়গা ভরাট করা হচ্ছে, এত দিন তাঁরা কী করলেন? নির্বিকার থেকে কি লেকের জায়গা দখলের সুযোগ করে দিলেন না তাঁরা? গুলশান লেকটি নিয়ে রাজউকের আরও আন্তরিক হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।