সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় অভিবাদন

সম্পাদকীয়

এ দেশে এখনো একজন নারীকে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়। উচ্চশিক্ষিত হয়েও কর্মজীবনে প্রবেশ করার সুযোগ হয় না অনেক নারীর। সেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া নারীদের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া আরও দুরূহ ব্যাপার।

এরপরও অনেকে আছেন, সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে পথচলা শুরু করেন। কষ্ট করে চালিয়ে যান পড়াশোনা। এরপর হাল ছেড়ে না দিয়ে নিতে থাকেন একের পর এক উদ্যোগ। একপর্যায়ে আসে সফলতা। ভূমিকা রাখেন সামাজিক উন্নয়নেও। হয়ে ওঠেন সবার জন্য অনুসরণীয়।

তেমনই একজন নারী সাতক্ষীরার দেবহাটা সদর গ্রামের মেয়ে শম্পা গোস্বামী (৪১)। বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া এই নারী পরবর্তী জীবনে যা করে দেখিয়েছেন, তা এককথায় অভাবনীয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, বাল্যবিবাহের শিকার হয়েও পড়াশোনা শেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন শম্পা। অল্প বয়সে নিজের অসহায়ত্বের অভিজ্ঞতা থেকে শম্পা গোস্বামী অসহায় নারীদের সাহায্য করা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার তাগিদ অনুভব করতেন।

তখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এলাকার নারীদের উন্নয়নে নেমে পড়েন। শুরুতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে রক্তদান ক্লাব, ঝরে পড়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানোর নানা উদ্যোগ নেন। সেসব কার্যক্রমে সাড়া পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলেন প্রেরণা নারী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠন।

কালীগঞ্জ উপজেলাসহ শ্যামনগর, আশাশুনি ও সাতক্ষীরা সদরে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ, সহিংসতার শিকার নারীদের আইনি সহায়তা, কৃষিকাজে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা করাসহ নানা বিষয়ে কাজ করছেন শম্পা ও তাঁর সংগঠন। সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ২০২২ সালে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে জেলা পর্যায়ে তাঁকে দেওয়া হয়েছে জয়িতা পুরস্কার।

অসহায় নারীকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে প্রেরণা। সেসব নারীকে নিয়ে স্বল্প মূল্যে শপিং ব্যাগ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, মাস্ক, নকশিকাঁথা ও নানা ধরনের হস্তশিল্পজাত সামগ্রী, সুন্দরবনের মধু ও বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি এবং বাজারজাত করছে সংগঠনটি।

এর মাধ্যমে কয়েক শ নারীর জীবন বদলে দিয়েছেন শম্পা। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়ে তুলেছেন তিনি।

একজন উদ্যমী ও স্বপ্নবান নারী একটি সমাজকে এগিয়ে নিতে পারেন। শম্পা গোস্বামী ও তাঁর সংগঠন এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সমাজ উন্নয়নে এমন ভূমিকা রাখায় আমরা তাঁকে অভিবাদন জানাই।