ময়মনসিংহে দালালের দৌরাত্ম্য থামান

জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহের আবেদনের জন্য ভোগান্তি এ দেশে যেন স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গেছে। এ ভোগান্তির মূলে রয়েছে দালাল চক্র। দালালের দৌরাত্ম্য দূর করতে অভিযান চালানো হয়, দালালদের ধরাও হয়, এরপরও ভোগান্তি থেকেই যায়। কারণ, এক চক্রকে থামানো গেলেও সেখানে ঢুকে যায় আরেক চক্র। কারণ, কর্তৃপক্ষের ভেতরেই মানে শর্ষের মধ্যেই যখন ভূত থাকে, তখন সেটিই তো ঘটবে। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণের সময় অনেকের নানা তথ্যঘাটতি থেকে যায়। সাধারণ মানুষ অনেক কিছু না বোঝার কারণে আবেদনে ত্রুটি থেকে যায়। আনুষঙ্গিক নথিপত্র যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদের কপি আনতে ভুলে যান অনেকে। ফলে সেই আবেদন তখন গ্রহণ করা হয় না এবং পরে যথাযথভাবে পূরণ করে বা সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু ময়মনসিংহ পাসপোর্ট কার্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, পাসপোর্টের জন্য আবেদনে কোনো ত্রুটি থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। দালাল ধরলেই সহজে মিলে যাচ্ছে পাসপোর্ট।

দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে, লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু মানুষকে সেবা প্রদানে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো সেই অর্থে ডিজিটাল বা স্মার্ট হতে পারেনি। সবকিছু নামকাওয়াস্তেই চলছে বলা যায়। তবে দালাল চক্র ঠিকই সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলে ফেলেছে। পাসপোর্ট কার্যালয়ের কাছেই কম্পিউটার দোকানে অতিরিক্ত টাকা বা ঘুষ দিয়ে একটি কোড নম্বর জোগাড় করলেই ময়মনসিংহ পাসপোর্ট অফিসে ত্রুটিযুক্ত আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। ঠিকঠাক ঠিকানা না থাকলেও বা জাতীয়তা বা চারিত্রিক প্রশংসাপত্র নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তা বাধা হচ্ছে না পাসপোর্ট পেতে। কারণ, দালাল চক্রই সেটি ‘ম্যানেজ’ করে দিচ্ছে।

দালাল চক্র পাসপোর্ট অফিসের ভেতরেই খুব শক্তভাবে বহাল, তা এখানে স্পষ্ট। নয়তো যাচাই-বাছাই ছাড়াই কম্পিউটার দোকানের কোড দেখেই আবেদনপত্র কীভাবে জমা নেওয়া হচ্ছে? পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে আসা অনেকের অভিযোগ, আবেদনে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কোনো না কোনো অজুহাতে ত্রুটি দেখিয়ে সেই আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাঁদের তখন বাধ্য হয়ে দালাল ধরতে হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি ও অতিরিক্ত টাকা খরচ দুটোই হচ্ছে। এ ছাড়া দালাল চক্রের কারণে বাংলাদেশি নাগরিক নয়, এমন ব্যক্তি বা রোহিঙ্গাদেরও পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থেকে যায়। 

আগে দালাল চক্র পাসপোর্ট অফিসেই ঘুরঘুর করত। পরে নিয়মিত অভিযান চালানো হলে দালাল চক্র তাদের কাজের ধরন পাল্টে ফেলেছে। তার মানে অভিযান চালিয়েও পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব নয়, যদি শর্ষের ভেতর থেকে ভূত তাড়ানো না হয়। এখন সেই ভূত তাড়াবে কে?