সমস্যার গোড়া খুঁজে বের করা দরকার

সম্পাদকীয়

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবার শুরু থেকেই প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে। গণ–আন্দোলনের কারণে কিছু পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। স্থগিত পরীক্ষাগুলো আবার গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সচিবালয়ে ঢুকে কিছু পরীক্ষার্থীর দাবি ও বিক্ষোভের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করে সরকার। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল নির্ধারণ করা হবে বিষয় ম্যাপিং করে।

এবার পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে। শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা বেড়েছে ৪৩৫টি। শঙ্কার কথা হচ্ছে, দেশের ৬৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কেউ পাস করতে পারেননি। গত বছর এ রকম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪২। অর্থাৎ পাসশূন্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আটটি প্রতিষ্ঠান, রাজশাহীর দুটি, কুমিল্লার চারটি, যশোরের সাতটি, চট্টগ্রামের পাঁচটি এবং ময়মনসিংহের চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী এবার ফেল করেছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

কোনো পরীক্ষার্থী পাস না করা প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি। এই বোর্ডের ২০টি কলেজ থেকে কেউ পাস করেননি। কলেজগুলোতে সর্বনিম্ন একজন থেকে সর্বোচ্চ আটজন করে পরীক্ষার্থী ছিলেন। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, গত বছর কোনো শিক্ষার্থী পাস না করা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে এবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ রকম ব্যবস্থা যদি নেওয়া হয়েই থাকে, তাহলে এবার কেন পাসশূন্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ল? তাহলে কি এমন ব্যবস্থা নেওয়াই আসলে কার্যকর কোনো পদ্ধতি নয়?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেননি, সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা এ–ও জানান যে কেবল সরকারি সুবিধা নেওয়ার জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেখা গেছে, কলেজ পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার পর কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চান না। অনেক প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয় না। সেখানে নিয়মিত লেখাপড়া হয় কি না, অবকাঠামোগত সুবিধা আছে কি না, এসবের যথাযথ তত্ত্বাবধান হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদাহরণ তৈরি করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে এগুলোকে উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে। যথাযথ পরিদর্শন ও তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় যদি প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিষ্ঠান বেশি হয়, তাহলে কোনো বিবেচনাতেই বাড়তি প্রতিষ্ঠানকে কলেজ পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি দেওয়া যাবে না।