স্বাবলম্বী হওয়ার অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত

সম্পাদকীয়

অনেকের চাষের জমি থাকা সত্ত্বেও কাজে লাগাতে পারেন না। ইচ্ছা ও পরিকল্পনার অভাবে সেই জমি পতিত থেকে যায়। অনেকের জমি না থাকলেও অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের গ্রাম-গঞ্জে ভূরি ভূরি। এসব খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জীবন এভাবেই পার হয়ে যায়। এ রকমই অন্যের জমিতে একজন বর্গাচাষি ছিলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার রফিকুল ইসলাম। কিন্তু স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার গুণে পাল্টে গেছে তাঁর জীবন।

তিনি এখন একজন আদর্শ কৃষক। ঔষধি গাছ চাষের মাধ্যমে নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, গ্রামের আরও কৃষককে পথ দেখিয়েছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পলাশবাড়ী উপজেলার মহদিপুর ইউনিয়নের কেত্তারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম (৫৬)। অল্প বসতবাড়ির জমি ছাড়া চাষের কোনো জমি ছিল না তাঁর।

অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করতেন। এতে ঠিকমতো সংসার না চলায় বাধ্য হয়ে রিকশা চালাতেন। কিন্তু এমন জীবনে তিনি স্থির থাকতে চাননি। চেয়েছেন জীবনকে বদলাতে, স্বাবলম্বী হতে। ২০০৭ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘরের আশপাশে ঔষধি গাছ লাগাতে থাকেন। সেই কালোমেঘ, বাসক, অর্জুন, তুলসীগাছই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

রফিকুল ইসলাম এখন চার বিঘা জমিতে এবং বাড়িসংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে ঔষধি গাছের বাগান ও নার্সারি গড়ে তুলেছেন। যেখানে নানা জাতের প্রায় ১০ হাজার ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন তিনি। বাড়ির পাশে করা বিক্রয়কেন্দ্রে ঔষধি গাছের পাতা, ডালপালা ও চারা বিক্রি করছেন। বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসব ঔষধি গাছের পাতা ও ডালপালা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় যার নুন আনতে পান্তা ফুরাত, সেই তিনি এখন মাসে ২৫ হাজার টাকা করে আয় করছেন। রফিকুল ইসলাম নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে থেমে যাননি। গ্রামের অন্যান্য অভাবী মানুষকেও স্বাবলম্বী হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর দেখাদেখি ঔষধি গাছের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন গ্রামের প্রায় ৩০ জন কৃষক।

সংসারে অভাব থাকায় লেখাপড়া করতে পারেননি রফিকুল ইসলাম। স্বাবলম্বী হওয়ায় সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করছেন এখন তিনি। বাবাকে নিয়ে সন্তানেরাও গর্ববোধ করেন। আমরা রফিকুল ইসলামকে অভিবাদন জানাই। গোটা জেলার কৃষকদের জন্য তিনি অনুসরণীয় হয়ে উঠুন।