জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন করছে কী

সম্পাদকীয়

খুলনার সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি খাল সরকার ইজারা দিয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে তাঁদের অনুসারীরা ইজারা পেয়েছেন। তাঁরা শর্ত ভেঙে খালে মাটির বাঁধ নির্মাণ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করছেন ইচ্ছেমতো।

প্রথম আলোর খবর বলছে, এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সেচ দিতে না পারায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের প্রতিনিধি যেখানে একজোট হয়ে অন্যায়ের সমর্থন দেন, সেখানে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই দায়। কয়রার মানুষেরা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি করেছে। সেই নীতির ২১ ধারায় আছে, বন্দোবস্তকৃত বা ইজারাকৃত জলমহালের কোথাও প্রবহমান প্রাকৃতিক পানি আটকে রাখা যাবে না।

এর পরের ধারায় আছে, যেসব জলমহাল থেকে (নদী, হাওর, খাল) জমিতে সেচ দেওয়া হয়, সেখান থেকে সেচ মৌসুমে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। কিন্তু ‘মাছ চাষ করে খালের বারোটা’ প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যাচ্ছে, শাকবাড়িয়া খালকে মাছ চাষের জন্য বাঁধ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ১০ খণ্ডে ভাগ করেছেন ইজারাদারেরা।

এতে করে খালটি সরু হতে হতে প্রায় নালা হয়ে গেছে। এতেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা, খালের কিনারে মাটি ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনাও গড়ে তুলেছেন। এসব স্থাপনা থেকে দেদার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ইজারা নিয়ে কোথাও আবার বালু দিয়ে খাল ভরাট করে মাঠ তৈরি হয়েছে। একই অবস্থা আমতলা খাল, কাশিরখাল, বেড়ের খালেরও। কাশির খালের স্লুইসগেট দিয়ে ঢুকছে লোনা পানি।

জানা যাচ্ছে, কয়রার খালগুলো প্রশাসন ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ১৩০ টাকায় ইজারা দিয়েছে। কিন্তু এর বদলে এলাকার মানুষের যে চাষবাস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে, তার অর্থমূল্য কত? উপজেলা প্রশাসন কি এ নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিস কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছে? কয়রার খাল নিয়ে যা হয়েছে, তা মাঠপর্যায়ে কর্মরত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। স্থানীয় সংসদ সদস্য জলমহাল ইজারায় সুপারিশ করে থাকেন।

কয়রাতেও করেছেন। কিন্তু জনগণের বিপদের সময় তাঁকে আর দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধি এলাকায় এলেও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ পরিবেষ্টিত অবস্থায় থাকেন। ভুক্তভোগী মানুষের কাছে যান না, তাঁরাও তাঁদের কষ্টের কথা বলার সুযোগ পান না।

আপাতদৃষ্টে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন—সবাই রাজা, জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। কেউ কারও কাছে কোনো অন্যায়ের জন্য জবাবদিহি করছেন না। অনতিবিলম্বে ইজারার শর্ত ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাঁদের উপেক্ষার কারণে খালগুলোর এমন যাচ্ছেতাই দশা, বিধি অনুযায়ী তাঁদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।