অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

দেশে শিক্ষিত বেকারদের নিয়েই যত আলোচনা হয়, পিছিয়ে থাকে দরিদ্র ও অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের বিষয়টি। সরকার এসব মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও সেগুলো কতটা সুফল দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

যেমন মাদারীপুর জেলা পরিষদ বেকার যুবক ও নারীদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের প্রকল্প নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে মাদারীপুর জেলা পরিষদের ‘দারিদ্র্য নিরসন ও নারী উন্নয়ন’ নামক প্রকল্পটির যাত্রা শুরু। এর মাধ্যমে প্রতিবছর কয়েক শ নারী ও যুবককে সেলাই, কম্পিউটার ও মোটর ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সেটিই যদি ঘটে থাকে, তাহলে প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম ও এককালীন অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এখানে কোনো গোষ্ঠী কাজ করছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নজরুল ইসলামকে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য করা হলেও তিনি গত ৯ মাসের মধ্যে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি যে এ কমিটির সদস্য, তা তিনি নিজেও জানেন না। তিনি নিজেই বলছেন, ওই প্রকল্পে অনিয়ম রয়েছে।

স্থানীয় নাগরিক সমাজও বলছে, এ প্রকল্পে কোনো জবাবদিহি নেই। বরাদ্দের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। বেকার ও দরিদ্রদের কোনো উপকার হচ্ছে না। এখন আমাদের প্রশ্ন, এই প্রকল্প কেন চালু রাখা হয়েছে? কেন জনগণের টাকা এভাবে নষ্ট করা হচ্ছে? প্রকল্পকে ঘিরে যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

১০ বছর ধরে চলমান এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। দুঃখজনক হচ্ছে, এই বিপুল টাকা খরচ করেও জেলা পরিষদের এই শুভ উদ্যোগের কোনো সুফল মিলছে না। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা মানতে রাজি নন।

যদিও অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থী এখানে শখের বশে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কোনো প্রশিক্ষণই ঠিকঠাক হয় না, অনেকে প্রশিক্ষণ না নিয়েও, এমনকি কেউ ঢাকায় বসেই সেলাই মেশিনসহ এককালীন টাকা পেয়ে যাচ্ছেন।

আরও ভয়াবহ অভিযোগ হচ্ছে, বেকার ও দরিদ্ররা বারবার আবেদন করেও এ প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হতে পারছেন না। তার মানে কি ইচ্ছাকৃতভাবে বেকার ও দরিদ্রদের এ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রাখা হয়?

সেটিই যদি ঘটে থাকে, তাহলে প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম ও এককালীন অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এখানে কোনো গোষ্ঠী কাজ করছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নজরুল ইসলামকে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য করা হলেও তিনি গত ৯ মাসের মধ্যে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি যে এ কমিটির সদস্য, তা তিনি নিজেও জানেন না। তিনি নিজেই বলছেন, ওই প্রকল্পে অনিয়ম রয়েছে।

স্থানীয় নাগরিক সমাজও বলছে, এ প্রকল্পে কোনো জবাবদিহি নেই। বরাদ্দের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। বেকার ও দরিদ্রদের কোনো উপকার হচ্ছে না। এখন আমাদের প্রশ্ন, এই প্রকল্প কেন চালু রাখা হয়েছে? কেন জনগণের টাকা এভাবে নষ্ট করা হচ্ছে? প্রকল্পকে ঘিরে যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।