দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে যাত্রীদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে। ঈদের আগে কয়েকটি নতুন সড়ক খুলেও দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে যাত্রীসাধারণ ভেবেছিলেন, তাঁরা নিরাপদে বাড়ি যেতে এবং বাড়ি থেকে ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু অনেকের কাছে সেই আনন্দযাত্রা বিষাদে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্য কিংবা অধিকাংশ সদস্য দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান।

এসব মৃত্যুর ঘটনা এতটাই আকস্মিক ও অস্বাভাবিক যে নিছক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া কঠিন। ১৬ এপ্রিল সকালে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হন, যাঁদের মধ্যে ৪ জনই এক পরিবারের সদস্য। সকাল পৌনে আটটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের দিগনগর তেঁতুলতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কানাইপুরের দিগনগর গ্রামের বাসিন্দা সাহানা বেগম বলেন, ঘটনাস্থলে আসার পর বাসটির একটি চাকা রাস্তার গর্তে পড়ে যায়। গাড়িটি আড়াআড়িভাবে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় পিকআপ ভ্যানটি বাসটির মাঝামাঝিতে এসে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সড়ক ও সেতু বিভাগ সড়ক উন্নয়নের নানা গল্প শোনায় আমাদের। কিন্তু ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কেন বাসের চাকা গর্তে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটবে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য যদি চালক দায়ী হন, সড়কে গর্ত থাকার দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নিতে হবে। তাদের দায়িত্বে অবহেলার জন্যই ১৩টি জীবন ঝরে গেল।

অন্যদিকে ঈদের দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ঘটনাটিও মর্মান্তিক। সেখানে পন্টুনে দুটি লঞ্চ বাঁধা ছিল এবং সেই লঞ্চে ওঠার জন্য অপেক্ষমাণ পাঁচজন যাত্রীর মৃত্যু হয় পন্টুনের সঙ্গে লঞ্চ বাঁধার কাছি ছিঁড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঈদের দিন বিকেলে সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামের দুটি লঞ্চ বাঁধা ছিল। বেলা তিনটার কিছুক্ষণ আগে এ দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান-৬ নামের আরেকটি লঞ্চকে পন্টুনে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। এ সময় এমভি তাসরিফ-৪-এর রশি ছিঁড়ে পন্টুনে অপেক্ষমাণ পাঁচ যাত্রীকে আঘাত করে। এতে তাঁরা মারা যান।

এই দায়িত্বহীনতার জবাব কী। অপেক্ষমাণ দুটি লঞ্চের মধ্যে আরেকটি লঞ্চ ঢোকানোর সময়ে যে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, সেটা টার্মিনাল কর্মীদের অজানা থাকার কথা নয়। রিমান্ডে নেওয়া দুই কর্মী দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। কিন্তু তৃতীয় লঞ্চটি পন্টুনে ঢোকানোর সিদ্ধান্ত কি তাঁরাই নিয়েছিলেন, না ঊর্ধ্বতন কেউ ছিলেন?

যে টার্মিনালে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেন, সেই টার্মিনালের কর্মীদের এই দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যায় না। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীও বলেছেন, নৌপরিবহন সংস্থার কেউ দায়ী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করতে চাই, কমিটি দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পিছপা হবে না।

ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে সড়ক ও নৌপথে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিটি ঘটনার পেছনে কারও না কারও অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা আছে। যদি সড়ক ও নৌপথে আমরা মৃত্যুর মিছিল বাড়াতে না চাই, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে।