দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণ ও স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (বাইগাম)। সেই প্রতিষ্ঠানই যদি জরাক্রান্ত হয়, তাহলে প্রবীণদের যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।

জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ অনুযায়ী ৬০ বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিরা প্রবীণ। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। কিন্তু তাঁদের কল্যাণ ও নিরাপত্তায় খুব বেশি প্রতিষ্ঠান নেই।

তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর বাসভবনে ১৯৬০ সালে বাইগাম গড়ে তোলেন।

বর্তমানে আগারগাঁওয়ে প্রবীণ ভবনে ৫০ শয্যার প্রবীণ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন (আইজিএম) এবং পাশে একটি ভবনে ৫০ শয্যার প্রবীণ নিবাস রয়েছে। নিবাসে বাসিন্দা আছেন ৩৬ জন। নিবাসটি ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে। অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানই ভর্তুকি দিয়ে চলে, সেটা হয়তো দোষের নয়। প্রশ্ন হলো, সেই ভর্তুতির অর্থ কমিটির নেতারা প্রবীণদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন, না নিজেরা আখের গুছিয়েছেন, সেটা তদন্ত করে দেখা দরকার।

প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে। অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা শাখার পরিচালক মো. মোকতার হোসেনকে (যুগ্ম সচিব) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় অধিদপ্তর। প্রবীণদের কল্যাণে প্রবীণদের নিয়ে গঠিত কমিটিই যদি অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়ে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী আছে? কেন এমনটি হবে? যাঁরা প্রবীণদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে নয়ছয় করেন, তাঁদের কাছে সেই প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তর যে কমিটি বাতিল করে, সেখানে পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে, সেটা যথার্থই ছিল। কিন্তু প্রশাসক দিয়ে তো এই প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না।

্রথম আলোর খবরে বলা হয়, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম ও অভ্যন্তরীণ বিবাদ–বিশৃঙ্খলায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (বাইগাম) ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়েছে। গত বছরের ২৮ মার্চ সরকার গঠিত চার সদস্যের একটি কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও ভগ্নদশার কথা উঠে এসেছিল। নানা অনিয়মের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ, বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছিল তদন্ত কমিটি।

প্রতিষ্ঠানটির ১১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না এক বছর ধরে। এ অবস্থায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আধা ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা। প্রবীণদের নিয়ে প্রবীণদের কল্যাণে গঠিত প্রতিষ্ঠান এভাবে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। তবে এই ধ্বংসক্রিয়ায় কেবল কমিটির নেতারা জড়িত নন, একশ্রেণির কর্মীও জড়িত। দুর্নীতি হয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতায়।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কার্যনির্বাহী কমিটি প্রথা বিলুপ্তি করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ‘বঙ্গবন্ধু প্রবীণ কমপ্লেক্স’ তৈরির যে দাবি করেছেন, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। নতুন কমপ্লেক্স করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, এমন নয়।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি ২০ মার্চ বাইগামে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। খোঁজখবর নেওয়ার চেয়েও জরুরি হলো সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করা। সমাজকল্যাণমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেন, সেটাই দেখার বিষয়।

ঈদের আগে কর্মীদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করা হোক। এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সমাজকল্যাণমন্ত্রী সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। সর্বোপরি প্রবীণ হিতৈষী সংঘের যেসব ব্যক্তি অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তহবিল তছরুপ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।