কুমিল্লায় ৭৯২টি বিদ্যালয় কীভাবে চলছে

প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়েই একটি শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু। ফলে মা-বাবার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই শিশুর মানস ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে বড় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষকদের সংকট আছে দেশে। এর মধ্যে আরও দুঃখজনক হচ্ছে, দেশের শত শত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। এর মধ্যে শুধু কুমিল্লা জেলায় প্রায় আট শ বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক নেই। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছাড়া কীভাবে বিদ্যালয়গুলো চলছে, সেটিই এখন প্রশ্ন।

গবেষণা বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২০ কে আদর্শিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত নির্দিষ্ট করা আছে ১:৩০। দেখা যাচ্ছে, দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই সে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে আছে। গত বছর জুনে জাতীয় শিক্ষা সংলাপে বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বর্তমানে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা চার লাখের মতো। আর গড়ে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। শিক্ষকসংকট নিঃসন্দেহে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে পিছিয়ে দিচ্ছে আর সেই সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে প্রধান শিক্ষক না থাকার বিষয়টি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলায় ২ হাজার ১০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন। বাকি বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সে হিসাবে জেলাটিতে তিন ভাগের এক ভাগের বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এমনও দেখা যাচ্ছে, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ার কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও সেই পদ আর পূরণ হয়নি। প্রধান শিক্ষক না থাকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক চলতি দায়িত্ব পালন করেন। এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ হয়। আর বাকি ৬৫ শতাংশ পূরণ করা হয়ে থাকে পদোন্নতির মাধ্যমে। পদোন্নতির মাধ্যমে যাঁরা প্রধান শিক্ষক হবেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকটি উপজেলার নথি মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলে সেসব উপজেলায় পদ পূরণ হবে। অন্যদের পদোন্নতির নথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব নথি অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে কি পড়েই থাকবে। প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি কেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হবে না? শিশুশিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে বেগবান করতে কুমিল্লার সব উপজেলায় শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হোক।