ধামরাইয়ে প্রশাসন কী করছে

একে তো লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি, সেখানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে ট্রান্সফরমার চুরি। এতে সরকার ও ভোক্তাদের উভয়েরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আর একটি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার পর নতুন আরেকটি প্রতিস্থাপন পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন তো থাকতেই হয়। কিন্তু ট্রান্সফরমার চুরি কোনোভাবে ঠেকাতে পারছে না পুলিশ-প্রশাসন।

এমনটি দেখা যাচ্ছে ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলায়। সেখানে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ (পবিস) কুশরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকা থেকে গত ১৪ মাসে ৫৮টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ফলে ট্রান্সফরমার লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে গ্রাহকদের। স্থানীয় মানুষ মনে করছেন, এ চুরির সঙ্গে জড়িত পল্লী বিদ্যুতেরই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোনো গোষ্ঠী। নইলে এত নির্বিঘ্নে একের পর এক ট্রান্সফরমার চুরি কীভাবে সম্ভব? 

ট্রান্সফরমার লাগানোর ক্ষেত্রে পবিসের নীতি এ চুরির সুযোগ করে দিচ্ছে। পবিসের নিয়মানুযায়ী প্রথমবার চুরির জন্য গ্রাহকদের নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এরপর চুরি হলে ট্রান্সফরমারের পুরো মূল্য পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। এই নিয়মের কারণে একবার চুরির পর ট্রান্সফরমার নিয়ে পবিসের কোনো দায়ও থাকে না। এমনও দেখা গেছে, একই জায়গায় বারবার চুরির ঘটনায় নতুন ট্রান্সফরমারের জন্য একই গ্রাহকদের কয়েক দফা অর্থ খরচ করতে হয়েছে। সামর্থ্যহীন লোকেরা এতে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, ‘একটি ট্রান্সফরমারের ওজন সাড়ে আট মণ। এত বড় একটা জিনিস কীভাবে চুরি হয়? আমাদের ধারণা, এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জড়িত। কারণ, সাধারণ কোনো মানুষ এটি খুলতে গেলে কারেন্টের শক খেয়ে মারা যাবে। অভিজ্ঞতা আছে বলেই নিতে পারছে।’ তাঁদের এ অভিযোগ খুবই যুক্তিসংগত। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ টাকার বিদ্যুতের তারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বক্তব্য, সরকারি সম্পদ রক্ষা ও উদ্ধারে তাঁরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন; যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ট্রান্সফরমারই তাঁরা উদ্ধার করতে পারেনি। এ কারণে তাঁদের এ অভিযান নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ট্রান্সফরমার চুরি রোধে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রান্সফরমার স্থাপনের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচনে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, যাতে চোররা সহজে এটি চুরি করতে না পারে। তবে এখানে স্থানীয় প্রশাসন ও থানা-পুলিশের তৎপরতা বেশি জরুরি। ভুক্তভোগীরা যে অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হোক। এই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ছাড় নয়। আমরা ওই এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরির আর একটা ঘটনাও দেখতে চাই না।