নেত্রকোনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ঘুষ লেনদেন। সরকারি অফিসে বা সরকারি কাজে ঘুষের লেনদেন নিয়ে সরকারের মন্ত্রীসহ জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে সমালোচনা করে থাকেন। এরপরও সড়ক থেকে শুরু করে একেবারে সুরম্য অফিস পর্যন্ত ঘুষ–বাণিজ্য চলছেই। সংবাদমাধ্যমে দেদার শিরোনাম হলেও কারও কিছু যেন যায়–আসে না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দৃষ্টান্তমূলক না হওয়ায় ঘুষ আদায় থামানো যাচ্ছে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখছি, নেত্রকোনার মদনে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের প্রতি এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৫ সাল থেকে ডিপিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ভাতা বকেয়া রয়েছে। সেসব ভাতা উত্তোলনের জন্য মদন উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ জন শিক্ষক আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন শিক্ষকের আবেদন মঞ্জুর হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একেকজন শিক্ষক ভাতা পাবেন স্কেল অনুযায়ী ৫০ থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত। ভাতা উত্তোলনের ফাইলের কাজ করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও হিসাবরক্ষণ কার্যালয়।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বকেয়া ভাতার কাজ করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর জুবায়ের আহম্মেদের বিরুদ্ধে। তিনি ২৬ শিক্ষকের কাছ থেকে ৭৮ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। এখন প্রশিক্ষণের মোট ভাতা থেকে একটি অংশ দাবি করছেন জুবায়ের। এসব ঘুষের লেনদেনের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন একজন শিক্ষকনেতা। তিনিই মূলত শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করছেন। সর্বশেষ তিনি জনপ্রতি আড়াই হাজার টাকা তুলছেন। শিক্ষকদের দাবি, সেই টাকা দেওয়া হবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় প্রাথমিকে শিক্ষকতা মর্যাদাপূর্ণ একটি পেশা এবং বেশি বেতনের চাকরিগুলোর একটি। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বেতন পান ১৩তম গ্রেডে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের এ নিয়ে হতাশার শেষ নেই। স্বভাবতই প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাছে একসঙ্গে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা আসা বিশাল অর্থের জোগান। যদিও তাঁদের অনেকের সমান একই যোগ্যতা নিয়ে অন্য সরকারি চাকরিতে অনেকে মাসে এই টাকা বেতন পান। এখন শিক্ষকদের সেই টাকাতেও যদি এভাবে ভাগ বসাতে হয়, তা কী করে মানা যায়।

আমরা আশা করব, উপজেলাটিতে ডিপিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সব শিক্ষকের বকেয়া ভাতা দ্রুত পরিশোধ করা হোক। ঘুষের টাকা লেনদেন হয়ে থাকলে সেটিও ফেরত দিতে হবে। অভিযোগ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।