নদী থেকে বালু তোলা বন্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

সিডর, আইলা, আম্পানের মতো প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় থেকে বুক চিতিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে এই বন এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসবের মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও রয়েছে। সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু তুলে বেড়িবাঁধ সংস্কার করায় এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

ঘটনাস্থল পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শাকবাড়িয়া নদী। সেই নদীতে কয়েক দিন ধরে কয়েকটি খননযন্ত্র দিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু তুলেছে একটি চক্র। নদীর সুন্দরবনের পাশ থেকে বালু তুলে অপর প্রান্তে কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার সেই বালু বস্তায় ভরে ভাঙন ঠেকাতে নদীতীরেও ফেলছেন শ্রমিকেরা। অব্যাহতভাবে বালু তোলায় একদিকে বিলীন হচ্ছে নদীপাড়ের বনের অংশ, অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়ছে নির্মাণাধীন বাঁধ। বালু তোলায় ইতিমধ্যে সুন্দরবনের গাছগাছালি ভেঙে নদীতে পড়তে শুরু করেছে। কয়েকটি স্থানে ভাঙনের পরিধি বেড়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। এ ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিক্রির জন্য খননের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হলেও বালু তোলা যাবে না। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পাউবোর কর্মী, শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাউবোর বাঁধ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়রার দুটি পোল্ডারে ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনের বৈধ অনুমতি না থাকলেও দেদার বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সুন্দরবনের নদী থেকে অবৈধ বালু তোলার পেছনে একটি শক্তিশালী চক্র আছে। পাউবোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেই চক্রের সঙ্গে চুক্তি করে বালু তুলছে। সুন্দরবনের যে এলাকা থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেটি বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন। সেখানকার বন কর্মকর্তা সাদিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের পাশের নদী থেকে বালু তোলা বনের জন্য হুমকি।

সুন্দরবন ও নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে বালু তোলায় ভাঙনের ঝুঁকি বাড়লেও বন বিভাগ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে স্থায়ীভাবে বালু তোলা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুন্দরবন যেমন একটি বিরল বনভূমি, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এটি আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। তাই সুন্দরবনকে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা কাম্য নয়।