লোহাগাড়ায় দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ

খালের মাঝখানে একটি পাকা সেতু দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই সেতুর কোনো প্রান্তেই নেই সংযোগ সড়ক। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, এ যেন স্থাপত্যবিদ্যার অমীমাংসিত কোনো শিল্পকর্ম! কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, এ সেতু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতার ফল।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার জামছড়ি খালের ওপর নির্মিত ওই সেতু এখন পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। আড়াই বছর আগে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ওই সেতু বানানো হয়। কিন্তু এর দুই পাশে মাত্র দেড় শ ফুট সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি।

সেতুর খুব কাছেই গ্রামীণ রাস্তা রয়েছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে কয়েক দিনের মধ্যেই সেতুটি ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব। কিন্তু এ কাজের দায়িত্ব কার, তা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কেবল একে অপরের কাঁধে দায় চাপিয়ে চলছেন। প্রতিকার আসছে না। ঠিকাদার দাবি করছেন, প্রকল্পে ১২ ফুট প্রস্থের সংযোগ সড়কের অনুমোদন থাকলেও স্থানীয় লোকজন ১৮ ফুট প্রস্থ দাবি করায় কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।

আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলছেন, তিনি যোগ দেওয়ার আগেই সেতুটি উদ্বোধন হয়েছে। বিষয়টি তিনি জানতেন না। তিনি অবশ্য দ্রুত সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, পুরো বিষয়টি যথাযথ তদারকির অভাবে দীর্ঘদিন অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে।

পরিকল্পনাহীনতা, দায়িত্বহীনতা ও সমন্বয়ের অভাবের এ উদাহরণ নতুন নয়। কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাঁচ বছর আগে নিজেদের তাগিদে একটি বেইলি সেতুটি নির্মাণ করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। এখন নড়বড়ে অবস্থায় থাকা ওই বেইলি সেতু বর্ষাকালে ডুবে যায়। তবু বাধ্য হয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেই সেতুতেই চলাচল করছে। অথচ ওই বেইলি সেতুর পাশেই কোটি টাকার পাকা সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে কেবল স্মারক হয়ে! এ দৃশ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা আশা করি, দ্রুত এ সংকট সমাধান করা হবে। প্রথমত, প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সব পক্ষ—উপজেলা প্রশাসন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এক টেবিলে বসে সমস্যার সমাধানে পৌঁছাতে হবে। সেতুর প্রস্থ, সংযোগ সড়কের নকশা ও প্রয়োজনীয় বাজেট স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু প্রকল্পে সংযোগ সড়কের বরাদ্দ রয়েছে, তাই দ্রুত সেই বরাদ্দ কার্যকর করে সড়ক নির্মাণে বাধা দূর করতে হবে।

জনস্বার্থের প্রকল্প এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকতে পারে না। জনগণের দুর্ভোগ কমানোই সরকারি প্রকল্পের লক্ষ্য, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। ফলে প্রয়োজন দ্রুত সিদ্ধান্ত, দ্রুত বাস্তবায়ন এবং জনস্বার্থে কার্যকর ভূমিকা।