উপকূলে সূর্যমুখীর চাষ সম্প্রসারণ করা হোক

সম্পাদকীয়

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনার কয়রা। এ অঞ্চলের মাটিতেও লবণপানি ঢুকে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য হলো, বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৮ দশমিক ৬ লাখ হেক্টর উপকূলীয় এলাকার মধ্যে প্রায় ১০ দশমিক ৫৬ লাখ হেক্টর এলাকা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততাকবলিত। প্রতিবছর রবি ও খরিফ মৌসুমের একটা সময় কয়রাসহ এই অঞ্চলের খালগুলোয় পলি পড়ে। স্বাদুপানির অভাবে জমিতে সেচ দেওয়া যায় না। ফলে চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে মাটি। শুকনা মৌসুমে বড় এলাকাজুড়ে জমি পতিত থাকে।

কয়েক বছর ধরে কয়রার কৃষকেরা এই মৌসুমকেও কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন। কয়রা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সূর্যমুখীর চাষ করেছিলেন। পরের বছর চাষ হয়েছে দ্বিগুণের বেশি জমিতে। আর চলতি বছর সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে ২২০ হেক্টর জমিতে। এ বছর কয়রার ১ হাজার ৭০০ কৃষক নিজ নিজ জমিতে এই ফুলের চাষ করেছেন।

কয়রার কৃষক নির্মল চন্দ্র বলেছেন, কয়েক বছর আগেও চাষের জমি পতিত পড়ে থাকত। সেখানে এখন স্বল্প খরচে ফলন পাচ্ছেন। আবার সূর্যমুখীর উৎপাদনে খুব বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না। তৃষ্ণা ঢালী নামের এক কিষানি বলেছেন, দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদে তাঁর খরচ ২৫ হাজার টাকা। তিনি ৬৫ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন। কৃষকদের এই উদ্যোগে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আছেন। তাঁরা বিনা মূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করেছেন। তাঁরা বলছেন, তেলবীজের চাহিদা পূরণে সূর্যমুখীর চাষ খুবই ইতিবাচক।

বিশ্বব্যাংক রিভার স্যালাইনিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ এভিডেন্স ফ্রম কোস্টাল বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন বলছে, দুই দশকের মধ্যে ১৯ জেলার ১৪৮ থানা মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততায় আক্রান্ত হবে। এই অঞ্চলগুলো হলো সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ; খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, কয়রা, পাইকগাছা; বাগেরহাট জেলার মোংলা এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা।

ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষকে সুরক্ষা দিতে কৃষি ও মৎস্য বিভাগের দায়িত্ব এখন অনেক বেশি। অবশ্য এরই মধ্যে বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করেছেন। কয়রায় সূর্যমুখীর চাষে সাফল্য এসেছে। অন্যান্য অঞ্চলেও সূর্যমুখী চাষ ব্যাপক ভিত্তিতে করা যেতে পারে।

সূর্যমুখী চাষের আরও একটি ইতিবাচক দিক আছে। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কারণ, অন্যান্য তেলের মতো সূর্যমুখীতে কোলেস্টেরল নেই। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এই তেল রান্নায় ব্যবহার করতে পারছেন না। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ অতি উচ্চ মূল্যে আমদানি করা এই তেল কেনেন। বাংলাদেশে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়ানো গেলে আমদানিনির্ভরতা থেকেও আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।